সেঞ্চুরিটা শুধুই সাব্বিরের, দলের কিছু নয়!


ক্রীড়া ডেস্ক :

সবার আগে ডানেডিনে তার সেঞ্চুরির জন্য সাব্বির রহমানকে অভিনন্দন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। যে সহজ ব্যাটিং উইকেটে দলের টপঅর্ডার মিডলঅর্ডার আরেকবার পুরোদস্তুর ডিসঅর্ডার! সেখানে সেঞ্চুরি পেলেন সাব্বির। ১০৫ বলে এলো তার এই সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বড় ব্যবধানেই ম্যাচ হারলো। এটাও নতুন কিছু নয়। এর আগেও বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন এবং সেই ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছে।

সেঞ্চুরির পর সাব্বির রহমানের এই উদযাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

গেল বছরের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে লিটন দাসের সেঞ্চুরির কথাটা মনে করিয়ে দিচ্ছি। সেঞ্চুরি সত্ত্বেও দলের হার, সেই পরিসংখ্যান শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও অনেকের আছে। তবে এই সেঞ্চুরিতে সাব্বির রহমান নতুন যা করলেন তা হলো উদযাপন! ডানেডিনের মাঠে তার সেঞ্চুরি উদযাপনের ভঙ্গির বিস্তারিত বর্ণনা আগে জানি।

৪৬ নম্বর ওভারের তৃতীয় বলে টিম সাউদিকে চমৎকার কায়দায় বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৯ রানে পৌঁছালেন সাব্বির। পুরো ড্রেসিংরুম উঠে দাঁড়িয়ে তার সেই ৯৯ রানে পৌঁছানোকে স্বাগত জানাল হাততালি দিয়ে। পরের বলেই ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে পুল শটে সিঙ্গেলস নিয়ে সেঞ্চুরি পুরো করলেন। রান নেওয়ার সময়ই ডানহাত উঁচু করে বাতাসে ঘুষি দিয়ে নিজের সেঞ্চুরিকে নিজেই স্বাগত জানালেন।

ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে সতীর্থরা আরেক দফা হাততালি দিয়ে সাব্বিরকে অভিনন্দিত করলেন। ননস্ট্রাইক ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজ অপর প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে সাব্বিরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে সামিল। উইকেটের ওপরই সেজদা দিলেন সাব্বির। উঠে দাড়ালেন। ব্যাটকে বাম হাতে লম্বা করে আকাশমুখি কায়দায় ধরলেন। আর ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে টকিং বার্ডের মুখোচ্ছবি বানিয়ে বেশ কয়েকবার সেই মুখ খুললেন এবং বন্ধ করলেন।

ধরে রাখা ব্যাটের দিকে এক আঙ্গুলের ঈশারায় তাক করলেন। যেন বোঝাতে চাইলেন, ‘তোমরা সবাই চুপ করো, যা কথা বলার আমার ব্যাটই বলবে!’সাব্বিরের এই উদযাপনে একটা বিষয় পরিষ্কার, এই সেঞ্চুরিতে তার প্রতিপক্ষ মাঠের নিউজিল্যান্ড নয়, মাঠের বাইরে অন্য কোনো প্রতিপক্ষ ছিল! অলক্ষ্যে থাকা সেই প্রতিপক্ষের (পড়ুন সমালোচক) বিপক্ষে হয়তো সাব্বির এদিন ঠিকই জিতলেন, কিন্তু মাঠের ম্যাচে যে তার দল বাংলাদেশ হেরে গেলো!

সেঞ্চুরি করার পর সাব্বির রহমান
সেঞ্চুরি করার পর সাব্বির রহমান

এই সেঞ্চুরিটা শুধুই এবং শুধুই সাব্বির রহমানের। এর ভাগ, এর উদযাপন, এর কৃতিত্ব এবং এর কার্যকারিতা কোনো কিছুতেই আর কারওরই কোনো অংশগ্রহণ নেই। উপকারিতাও নেই! দুভার্গ্য হলো এই সেঞ্চুরির পরেও সাব্বিরকে শুনতে হবে তিনি তার সেঞ্চুরির জন্য খেলেন, দলের জয়ের জন্য নয়! ৫০ থেকে ১০০ তে পৌঁছাতে যেভাবে খেললেন সাব্বির তার পুরো অংশ জুড়েই যে এই অভিযোগ প্রমাণিত! দল যখন হারছে তখন তো উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যানের একমাত্র কাজ কি হওয়া উচিত? নিশ্চয়ই দলকে জেতাতে নিজেকে নিবেদন করা, নাকি নিজের সেঞ্চুরির জন্য নিরাপদ ব্যাটিংয়ের পথে হাঁটা!

সাব্বিরের সেঞ্চুরিটা শুধুমাত্র তার ক্যারিয়ারের কাজে লেগেছে, এই সেঞ্চুরি তার দলের কাজে যে লাগলো না। আপনি সেঞ্চুরি করলেন, কিন্তু দল হারলো বড় ব্যবধানে। তখন সেই সেঞ্চুরির মূল্য ব্যক্তিগতভাবে সেই ব্যাটসম্যানের কাছেই কেবল মূল্যবান। দলের কাছে সেটা ফুটো পয়সায়ও বিকাবে না! আর আপনার ২০ রানের ইনিংসই অনেক অনেক বেশি মূল্যবান হবে ক্রিকেট মানচিত্রে, যদি সেই রান দলকে জেতায়।

বাংলাদেশের ক্রিকেট হাঁটু গেড়ে দাড়ানোর ভিত্তি পেয়েছিল একটা লেগবাই রানের সুবাদে। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে হাসিবুল হাসান শান্তর সেই লেগবাই কেন যে কোনো সেঞ্চুরির ইনিংসের চেয়ে বেশি মূল্যবান জানেন?

কারণ, সেই লেগবাই আমাদের ম্যাচ জিতিয়েছিল! আর তাই সামান্য লেগবাই অনেক অসামান্য, অনেক অসাধারণ, যদি তা দলকে জেতায়। আর সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরিও যদি দলকে না জেতায় তবে পরিসংখ্যানের খাতায় সেটা নেহাত জিরজিরে সংখ্যা!

প্রার্থনা করি, সামনের দিনে সাব্বিরের ব্যাটেও যেন দল জেতে। সাব্বির যেন আরও অনেক অনেক সেঞ্চুরি পান। আরও অনেক শান্ত সৌম্য কায়দায় সেঞ্চুরির উদযাপন করেন। তাকে যেন আর শুনতে না হয়-দল যেখানে নিশ্চিতভাবে হারছে, সেখানে সেঞ্চুরি করে এত ফালাফালির কি আছে? খেলাটা দলীয়। এককের নয়!


শর্টলিংকঃ