‘স্কুলটা নদীত গেইল, মোর ছোয়াটা এ্যালা কোটে পড়বে বাহে!’


ইউএনভি ডেস্ক:

‘চোখের সামনোত এক পালাটাকার স্কুলটা হুর নদীত গেইল। মোর ছোয়াটা এ্যালা কোটে পড়া পরবে বাহে! বাড়ির কাছোত স্কুলটে ছিলো, মেলা ছোয়া পড়ছে। এ্যালা ছোয়াটা কোটে পড়বে তা নিয়ে ভাবচোং।’

স্কুলের অবশিষ্ট জায়গায় বসে আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধরলার নদীর তীরে মেখলীর চরের বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী। শুধু ইয়াকুব আলী নয়, চোখের সামনে ধরলা নদীতে অর্ধেক ভেঙে যাওয়ায় ৩০ বছরের পুরোনো এই স্কুলের সঙ্গে চরাঞ্চলের মানুষের যে স্মৃতি তা নিয়ে ভাবছেন অনেকেই।

ধরলা নদীর কারণে ফুলবাড়ী উপজেলার বিচ্ছিন্ন বড় ভিটা ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের একটি মৌজা মেখলিচর। দুর্গম ওই চরের বেশির ভাগেই পড়েছে ধরলা নদী। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো ৪০ বছর ধরে সেখানে বসবাস শুরু করেন। ধীরে ধীরে ঘনবসতি হওয়ায় ১৯৯০ সালে দুর্গম এই চরের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মেখলি চর খন্দকারপাড়া নামে একটি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ।

ধরলা নদী ওপারে বসবাসকারীদের জন্য ভোট কেন্দ্র করা হয় এই বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি করা হয়। গত বছর বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব ছিল ৫০০ মিটার। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় গত বছর থেকেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু আর শেষ রক্ষা হলো না। মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয় ভবনের একটি কক্ষ ভেঙে ফাটল ধরে হেলে পড়েছে ধরলা নদীতে। গর্ত হয়েছে কক্ষের ভেতরে। ভবনটির বাকি অংশ যেকোনো সময় বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় ভবনটিই নয়, গত কয়েকদিনে মেখলি চর গ্রামের ৯১টি পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে গৃহহীন হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুতের। বিলিন হযেছে ৪টি বিদ্যুতের পিলার। প্রচণ্ড স্রোতে ভেসে গেছে বিদ্যুতের মেইন সংযোগের তার।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে ৪০ শতাংশ জমির ওপর মেখলি চর খন্দকারপাড়া নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৯৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, আছেন চারজন শিক্ষক। সংস্কার প্রকল্পের আওতায় ২০০০ সালে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়।

বর্তমানে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ভবনের আংশিক অংশ ভেঙে হেলে পড়েছে ধরলা নদীতে। স্কুলটি ভাঙনের কবলে পাড়ার বিষয়টি জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে গত ২ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় শুধু আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শিক্ষার্থী আদুরী খাতুন ও সুমাইয়া খাতুন বলে, যে শ্রেণিকক্ষে পড়ালেখা করেছি তার ভিতরে বড় গর্ত হয়েছে। স্কুলটি ভেঙে গেলে পড়ালেখা হবে কিনা জানি না।

ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি আমির উদ্দিন বলেন, ভবন ভাঙার খবর প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বিদ্যালয়টি ছিল চরাঞ্চলের বাতিঘর। এখন কিভাবে ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখা করবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুর আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে এ এলাকায় ভাঙন তীব্র ছিল। পরিস্থিতি বেশি খারাপ দেখে স্কুলের আসবাবপত্র উঁচু স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কষ্ট করে চর অঞ্চলে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়েছে। এখন প্রশাসন কি করবে তার অপেক্ষায় রয়েছি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক বলেন, ভাঙনের মুখে পড়া স্কুলটির অবস্থা জানিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন করা হয়েছে। বিদ্যালয়টির আসবাব যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য নিরাপদ স্থানে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবনটির ব্যাপরে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। সুত্র- সমকাল


শর্টলিংকঃ