স্কুল খুলছে ফেব্রুয়ারিতে, একসঙ্গে চলবে দুই বছরের পড়া!


ইউএনভি ডেস্ক:

শিক্ষার্থীদের শিখন ফল মূল্যয়ন করতে যে এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল তাতে হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে। সব শিক্ষার্থীর মাঝেই ব্যপক শিখন ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় সিলেবাসের অধীনে শিক্ষার্থীদের আগের ক্লাসের পড়া পড়ানো হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শিক্ষকদের কাছে যাবে। তবে এবারে নবম ও একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরতরা পুরো সিলেবাসই পড়বে। করোনা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হওয়ার ওপর ভিত্তি করে পরে তাদের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

২০২১ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে জানুয়ারিতেই। তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেয়া হতে পারে ফেব্রুয়ারি থেকে। নতুন বছরে নতুন ক্লাসে পড়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আগের ক্লাসের পড়াও পড়তে হবে। সে কারণে শিক্ষার্থীরা পুরনো বই কোনোভাবেই যাতে নষ্ট না করে, তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে মাঠ কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) একাধিক স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আনতে সবরকমের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সে সময় করোনা মহামারি কতটুকু নিয়ন্ত্রণে আসে তার উপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আনা হবে। তবে শুরুর দিকে সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লাস করানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারির শুরুতেই যাতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। এখনও এ বিষয়ে কোন আদেশ জারি করা না হলেও অভ্যন্তীণভাবে সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে। এর আগের পরিকল্পনা ছিল জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শুরুতে ক্লাস শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে সেটি এগিয়ে আনা হয়েছে।

নভেম্বরের ২৫ তারিখে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারির ১ তারিখেই বই উৎসবের উদ্বোধন করবেন। আমরা আশা করছি জানুয়ারির শুরুতে লটারির কার্যক্রম শেষ করে জানুয়ারির মাঝামাঝিতেই ভর্তির সব কার্যক্রম শেষ করতে পারব।

তবে ১১ ডিসেম্বর মাউশি থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিসেম্বরের ৩০ তারিখেই সব স্কুলে ভর্তির লটারি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

নতুন বর্ষের সিলেবাস সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বছরে নতুন ক্লাসে পড়ার সঙ্গে আগের ক্লাসের বই পড়ানোর জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ চলছে। করোনায় শ্রেণি শিখন কাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ‘শিখন-ঘাটতি’ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নতুন শ্রেণির জন্য আগের ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের কিছু অংশ পড়া অপরিহার্য। সেই অংশটুকুই রুটিন করে শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠের সঙ্গে পড়ানো হবে। এজন্যই পুরনো পাঠ্যবই সারা বছরই সঙ্গে রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের শিখন ফল মূল্যয়ন করতে যে এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল তাতে হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে। সব শিক্ষার্থীর মাঝেই ব্যপক শিখন ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় সিলেবাসের অধীনে শিক্ষার্থীদের আগের ক্লাসের পড়া পড়ানো হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শিক্ষকদের কাছে যাবে। তবে এবারে নবম ও একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরতরা পুরো সিলেবাসই পড়বে। করোনা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হওয়ার ওপর ভিত্তি করে পরে তাদের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, গণিতে সরল অঙ্ক করার আগে গুণন, ভাগ ইত্যাদি করতে হয়। এখন যে শিক্ষার্থী আগের শ্রেণিতে এটা করে আসেনি, পরের শ্রেণিতে আগে তাকে এটা শেখানো হবে। এভাবে অন্যান্য বিষয়েও অপরিহার্য দিকগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত সব তথ্য বিষয়ভিত্তিক একীভূত করা হয়েছে। এখন তা শিক্ষক গাইডে (টিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরপর তা প্রত্যেক বিদ্যালয়ে পৌঁছানো হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরাতন বই সংরক্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা গেলেও কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে সে বিষয়ে কোন ‘অফিস আদেশ’ এখনও পৌঁছায়নি। তবে তারা সবসময়ই স্কুল খোলার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আগের ক্লাসের বই সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেভাবেই আমরা শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি। পুরাতন বই শিক্ষার্থীদের কতটুকু পড়ানো হবে সে বিষয়ে আমরা এখনও কোন নির্দেশনা পাইনি। স্কুল কবে খোলা হবে এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। আমরা নির্দেশনা পেলে যে কোন দিনই খুলে দিতে পারি। আমরা সবসময়ই প্রস্তুত।

স্কুল খোলার বিষয়ে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শিশুরা যাতে আবার তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে আসতে পারে এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পুনরায় শুরু করতে পারে সেজন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে ভালো দিন আসবে, আমাদের শিশুরা তাদের স্কুলে যেতে সক্ষম হবে, তারা স্বাভাবিকভাবে তাদের পড়াশোনা শুরু করবে। আমরা সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মিরপুর সেনানিবাসের জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা কোর্স-২০২০’ ও ‘সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধ কোর্স-২০২০’-এর স্নাতক অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এসব কথা বলেন।


শর্টলিংকঃ