হোয়াটসঅ্যাপ কি নিরাপদ!


সারাবিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ এখন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। হোয়াটসঅ্যাপের মূল উদ্ভাবক মেটার দাবি, তাদের প্ল্যাটফর্মে মেসেজ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড, যার কারণে সিকিউরিটি বেশ শক্তিশালী। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে এমনও বহু অভিযোগ আছে যে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অজান্তেই মেসেজ পড়েন অন্যরা।

নিজের অজান্তের মেসেজ শনাক্ত

হোয়াটসঅ্যাপ ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ ডিভাইসে কিউআর স্ক্যান করে লগইন করতে হয়। ভুলবশত লগআউট না করলে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসে প্রবেশ করে অনাহূত ব্যবহারকারীর মেসেজ দেখতে পারে। তাই অন্য কোনো ডিভাইসে লগইন করলে অবশ্যই লগআউট নিশ্চিত করতে হবে। যার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করে থ্রি-ডট অপশনে ক্লিক করলে ‘লিঙ্কড ডিভাইস’ নামে অপশন দৃশ্যমান হয়। ওই অপশনে কতগুলো ডিভাইসে লগইন হয়ে আছে, তা দেখা যাবে। লিঙ্কড ডিভাইসের ওপর ক্লিক করলেই লগআউট অপশন পাওয়া যাবে। লগআউটে ক্লিক করলে অন্য ডিভাইস থেকে অ্যাপটি পুরোপুরি লগআউট হয়ে যাবে।

প্রোফাইল সিকিউরিটি– কন্টাক্ট লিস্ট সতর্কতা

স্মার্টফোনে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক কন্টাক্ট সংরক্ষণ করে রাখা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি ফোন কন্টাক্টের অ্যাকসেস নিয়ে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপের বর্তমান নীতি অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তির কাছে কন্টাক্ট নম্বর থাকামাত্রই সে চাইলে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করতে পারবে। সচেতন হতে হবে যে কার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে সংযুক্ত থাকতে চাই বা যোগাযোগ করতে চাই। বহু অপ্রয়োজনীয় নম্বরও কন্টাক্ট লিস্টে থাকতে পারে বা বহু পুরোনো কেউ, যার সঙ্গে বর্তমানে তেমন একটা যোগাযোগ নেই; সে ক্ষেত্রে এসব কন্টাক্ট ডিলিট করে দেওয়া বা তাদের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতে না দেওয়াই উত্তম।

ছবি নির্বাচনে সাবধানতা

হোয়াটসঅ্যাপে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার মতো প্রোফাইল ছবি দেওয়া যায়। প্রোফাইলের ছবি নির্বাচনে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যাতে প্রোফাইলের ছবি পরে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফেলে। প্রোফাইলের ছবি নিজের বা কর্মক্ষেত্রের খুব সাধারণ কোনো ছবি হওয়া উচিত। প্রোফাইলের ছবিটি যদি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া থাকে, তাহলে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে ছবিটি হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত যে কারও নজরে আসতে পারে।

দুই স্তরের ভেরিফিকেশন

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে অবশ্যই দুই স্তরের ভেরিফিকেশন পদ্ধতি চালু রাখা উচিত। যাতে ব্যবহারকারীর অগোচরে অন্য কেউ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। সাধারণত ফোন নম্বর ব্যবহার করে ফোন ছাড়া অন্য ফোনে বা কম্পিউটারে হোয়াটসঅ্যাপ লগইন করার চেষ্টা করা যায়। অবশ্যই দুই স্তরের ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে অনুমোদনহীন লগইন প্রতিহত করা যায়।

পাবলিক শেয়ারে সতর্ক

অনেকে হয়তো জানেন না, হোয়াটসঅ্যাপে স্ট্যাটাস মেসেজ দেওয়া যায়, যা কিনা ভুল সেটিংসের কারণে পাবলিক মেসেজ হিসেবে সবার কাছে উন্মোচিত হতে পারে। এটা না করে সব সেটিংস বদলে স্ট্যাটাস মেসেজগুলো শুধু পরিবার, বন্ধু বা যারা হোয়াটসঅ্যাপে সংযুক্ত আছেন, তাদের জন্য উন্মুক্ত করা যেতে পারে।

গ্রুপে সবাইকে যুক্ত না করা

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় দিক হলো বিভিন্ন গ্রুপ এবং সেসব গ্রুপের আলোচনা। কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন মিলে গ্রুপ তৈরি করা যায়। যেসব গ্রুপের আলোচনা শুধু গ্রুপের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু কাউকে যে কোনো গ্রুপে যুক্ত করার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে (Who can add me to groups) তিনটি অপশন পাওয়া যায়। যেমন– Everyone বা My Contacts বা My Contact Except; যার মধ্যে অবশ্যই Everyone অপশনটা বাদ দিয়ে বাকি দুটি অপশনের মধ্যে নির্বাচন করা নিরাপত্তার জন্য শ্রেয়।

হ্যান্ডসেটে ডাউনলোড না করা

হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা বা মেসেজ বিনিময়ের বাইরেও প্রয়োজনীয় ফাইল শেয়ার করা যায়। এসব ফাইল যেন সরাসরি ফোন মেমোরিতে সেভ না হয়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ডিফল্ট সেটিংস অনুযায়ী হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ারকৃত সব ছবি সরাসরি ফোন গ্যালারিতেই সংরক্ষিত হয়। শেয়ার করা ফাইল ব্যবহারকারীর অনুমতি সাপেক্ষে ফোন মেমোরিতে সংরক্ষিত হতে হবে। তা না হলে বহু অপ্রয়োজনীয় বা অপ্রত্যাশিত ফাইল নিজের স্মার্টফোনে সংরক্ষণ হতে থাকবে। ফলে ফোনের স্টোরেজ যেমন বেশি ব্যবহৃত হবে, তেমনি অপ্রত্যাশিত ফাইলের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।

ক্লাউড স্টোরেজে অটো ব্যাকআপ না করা

হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহৃত সব তথ্য ক্লাউডে অটোমেটিক ব্যাকআপ না রাখাই শ্রেয়। তা না হলে ক্লাউডের মূল্যবান স্টোরেজ ব্যবহৃত হতে থাকবে; বরং প্রয়োজনীয় ব্যাকআপটুকু ক্লাউডে রাখার চর্চা করতে হবে। ফলে ক্লাউড স্টোরেজের বহুমাত্রিক ব্যবহার সুনিশ্চিত হবে।

আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও

হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কোনো রকম আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেহেতু আমাদের দেশে পর্নোগ্রাফি শাস্তিযোগ্য অপরাধ (সাইবার ক্রাইম)। তাই এ সংশ্লিষ্ট কোনো ভিডিও, ছবি বা অডিও ফাইল অন্যের সঙ্গে শেয়ার করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই বিবেচ্য। যদি কেউ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি শেয়ার করেন, তাহলে যিনি এটি রিসিভ করছেন, তিনি চাইলে আইনি ব্যবস্থার সহায়তা নিতে পারবেন।


শর্টলিংকঃ