৪ দিনের ছুটিতে ইবি হল বন্ধ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ


ইবি প্রতিনিধি:

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ৪ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে প্রশাসন। তবে এ ছুটিতে আবাসিক হলসমূহ ৮ দিন বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৩ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত হল বন্ধের সুপারিশ করেছে হল প্রভোস্ট কাউন্সিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এস আব্দুল লতিফ।

 

 

প্রশাসনের হল বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছ শিক্ষার্থীরা। সেইসাথে হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে মঙ্গলবার ১১ টা পর্যন্ত সময়ও বেধে দেয় তারা।

জানা যায়, সোমবার প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভায় পূজার ছুটিতে আবাসিক হল বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে উপাচার্যের নিকট সুপারিশের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় এসে এ সুপারিশ অনুমোদন দিবেন উপাচার্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলিরে সভাপতি প্রফেসর ড. আকরাম হোসেন মজুমদার বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৬ থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিন ছুটি রয়েছে। একই সাথে ৩ ও ৪ এবং ১০ ও ১১ নভেম্বর রয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। ৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার নির্বাহি ক্ষমতা বলে ছুটি ঘোষণা করেন। পূজার ছুটির সাথে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ করে ৩ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রেজিস্ট্রার অফিস। প্রভোস্ট কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ তারিখ সকাল ১১ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৫ নভেম্বর সাধারণ ছুটি ঘোষণার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়েরর বিভিন্ন বিভাগের ১১টি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ছুটির পর প্রথম দিন ১২ নভেম্বর বিভিন্ন বিভাগে আরও ১৬টি পরীক্ষার সিডিউল রয়েছে জানিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।

এদিকে প্রশাসনের হল বন্ধের এ সিন্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সোমবার সন্ধ্যায় লালন শাহ হল থেকে এ  মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পরে অন্য হলের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়।  মিছিলটি ক্যাম্পাসের আবাসিক হল এলাকা ও বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিয়া মোড়ে এসে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে মঙ্গলবার ১১ টা পর্যন্ত সময় বেধে দেয় ও হল না ছাড়ার ঘোষণা দেয়।

তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার মাঝে এভাবে হঠাৎ হল বন্ধ করে হলে শিক্ষার্থীদেরকে বিপাকে পড়তে হবে। আবার হল খোলার পর দিন থেকেই পরীক্ষা থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে তাতে অংশ নেওয়া কষ্টকর হবে।

প্রশাসনের এ সিদ্ধানের প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘একান্ত বাধ্য না হলে ইবির আবাসিক হল বন্ধ করা উচিত হবেনা।’

মিথিলা ফারজানা নামের এক শিক্ষার্থী এক পোস্টের কমেন্টে লিখেছেন, ‘সিদ্ধান্তটা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর চরম ভোগান্তির কারণ হলো। বিশেষ করে যাদের বাসা অনেকদূর, যাদের পরীক্ষা চলছে ও যারা টিউশনি করায়। এরকম অযৌক্তিক ও উদ্ভট সিদ্ধান্ত নেবার  আগে শিক্ষার্থীদের কথা ভাবা দরকার ছিল।

সাইফুল বিন শরীফ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘প্রশাসন যদি এরকম সম্পূর্ন অমানবিক অপ্রত্যাশিতভাবে হল বন্ধের ঘোষণা দেন তাহলে আমার দাবি থাকবে বাসায় যাওয়া আসা বাবদ আমাকে যেনো  ২০০০ টাকা দিয়ে দেন। কারণ আমি পরীক্ষার মাঝে কোনোভাবেই বাসায় যাওয়ার পক্ষে নই। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত মানিনা।’

 


শর্টলিংকঃ