পুঠিয়ায় সন্ধা নদী দখল নিয়ে মাছ চাষ : মৎস্যজীবিদের ক্ষোভ


 আবু হাসাদ,পুঠিয়া:

রাজশাহীর পুঠিয়ায় সন্ধ্যা নদী দখল করে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। তারা রীতিমত কথিত মৎস্য কমিউনিটির নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নদীতে মাছের উৎসমুখ দখল করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করে এক কিলোমিটার জুড়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এতে করে ওই এলাকার মৎস্যজীবি পরিবার গুলোর মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

পুঠিয়ায় সন্ধ্যা নদী দখল নিয়ে মাছ চাষ:মৎস্যজীবিদের ক্ষোভ
পুঠিয়ায় সন্ধ্যা নদী দখল নিয়ে মাছ চাষ:মৎস্যজীবিদের ক্ষোভ

জানাগেছে, বিগত দিনে সন্ধা নদীর এই গভীরতম স্থান সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। এ বছর স্থানীয় প্রভাবশালীরা নন্দনপুর বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। তারা উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য কর্মকর্তার বিশেষ সহযোগিতায় রীতিমত কথিত মৎস্য কমিউনিটির নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাছের উৎসমুখ দখল করেছে। নদীর পাশাপাশি তাদের দখলে স্থানীয় ব্যক্তি মালিকানা জমিও রয়েছে।

এলাকার মৎস্যজীবিরা বলেন, সন্ধা নদীতে মাছ ধরে এই এলাকার প্রায় ৩০ মৎস্যজীবি পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নদীটি বেশীর ভাগ এলাকা ভরাট হয়ে যাওয়ায় শীতের শুরুতেই তা শুকিয়ে যায়। তবে নদীর যে অংশটি প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে তা মাছের অভয়াশ্রম। সেখানে সারা বছর পর্যাপ্ত পানি থাকে। বিগত দিনে নদীটি আমাদের মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত ছিল।

এবার কয়েকজন স্থানীয় ক্ষমতাসিন ব্যাক্তি আমাদেরকে নদীতে নামতে দেয় না। তারা রীতিমত সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে আমাদের মধ্যে অনেক মৎস্যজীবি পরিবার বিপাকে পড়েছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মা বলেন, প্রভাবশালীরা বর্তমান ক্ষমতাসিন দলের লোকজন। তারা দলের প্রভাব খাটিয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ছেড়েছেন। সেখানে আমাদের নিজস্ব প্রায় আড়াই বিঘা জমি রয়েছে।

কথিত মৎস্য কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ নামে সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে নন্দনপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান, হাতিনাদা গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও জাহিদ হোসেন নামের তিন ব্যাক্তি। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অফিসকে একাধিকবার অবহিত করেও আমি কোনো সুরাহা পাইনি। বরং ওই প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে প্রতিনিয়ত আমাদের কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। স্থানীয় তাহের আলী বলেন, সন্ধা নদী কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এখানে মৎস্যজীবিদের পাশাপাশি এলাকার সবাই মাছ ধরবে ও পানি ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু এখানে স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নদী দখল করে মাছ চাষ শুরু করেছে। তাদের দাপটে এক কিলোমিটার সন্ধা নদীতে কেউ নামতে পারছে না। তিনি বলেন একটি উন্মুক্ত নদী কিভাবে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অফিস মাছ চাষ করতে অনুমতি দেন? এ বিষয়ে কথিত মৎস্য কমিউনিটির সভাপতি শরীফুল ইসলাম বলেন, আমি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এই কমিউনিটিতে যারা আছেন সবাই দলীয় লোকজন। আমরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও প্রশাসনের মৌখিক অনুমতিক্রমে নদীতে মাছ চাষ করছি। তবে তারা আমাদের লিখিত কোনো অনুমতি দেননি।

তবে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী বলেন, সন্ধা নদীর ওই স্থানটি আবর্জনাতে অপরিস্কার থাকতো। তাই ওখানে কিছু লোকজন নদী পরিস্কার করে মাছ চাষ করছে। ওদের বলা হয়েছে মাছ চাষে এলাকার সকলের যেনো অংশগ্রহণ থাকে। আর যেহেতু মৎস্যজীবিরা মাছ চাষে টাকা-পয়সা দিতে পারেনি তাই ওদের অংশগ্রহণ নেই। এতে তারা এখানে সেখানে উল্টা পাল্টা অভিযোগ করে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, নদী উন্মুক্ত থাকবে। এখানে সকলে মিলে মাছ ধরা ও চাষ করতে পারেন। তবে নদীতে কোনো বাঁধ দেয়া যাবে না। সন্ধা নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তার মাধ্যমে খোজ নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ