অপারেশন সান ডেভিল মামলা : এক শীর্ষ জঙ্গির খোঁজে পুলিশ


জিয়াউল গনি সেলিম :

রাজশাহীর সবচে’ বড় জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘অপারেশন সান ডেভিল’র মামলার তদন্তকাজ শেষ হয় নি দুই বছরেও।  এ মামলার এজাহারভুক্ত এক শীর্ষ জঙ্গির নাগালই পাওয়া যাচ্ছে না। তার খোঁজে রয়েছে পুলিশ। ফলে  মামলার  তদন্তে ধীরগতি । এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তবে পুলিশ বলছে, মামলাটি ক্রিটিক্যাল হওয়ায় তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগছে।

২০১৭ সালের ১১মে গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুর গ্রামের ফেরিওয়ালা সাজ্জাদ আলীর বাড়ি ঘিরে অপারেশন ‘সান ডেভিল’পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে নিহত হয় সাজ্জাদ আলী মিষ্টু (৫০), তাঁর স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), ছেলে আল-আমিন (২০) ও মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭) এবং বহিরাগত আশরাফুল (২৫)।জঙ্গিদের ছোঁড়া বিস্ফোরণে আহত হয় চার পুলিশ সদস্যও।

আর তাদের হামলায় নিহত হন ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান আব্দুল মতিন। এসময় দুই শিশু সন্তানসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়া। এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন গোদাগাড়ী থানার এসআই নাঈমুল হক। কিন্তু দু’বছর পরও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই মামলা তদন্তে।

এই মামলার আট আসামীর মধ্যে ৫জনই নিহত হয় ওই অভিযানে। বাকি তিনজনের মধ্যে সুমাইয়া ও সবুর কারাগারে। আরেক আসামীর নাগাল এখনো পায় নি পুলিশ।

এবিষয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ্ ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেছেন, মামলাটি ক্রিটিক্যাল। তাই পুরো প্রক্রিয়া ও পরিস্থিতি বুঝে এগুতে হচ্ছে। এজন্য সময় লাগছে। অধরা ওই আসামী ( তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হলো না) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যই পাওয়া গেছে। সে বড় মাপের জঙ্গি, তাও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ওই জঙ্গি জেএমবির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তার অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই সে পুলিশের জালে ধরা পড়বে বলে  আশা করছেন এসপি।

এরইমধ্যে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন পাঁচজন। মামলাটি এখন তদন্ত করছেন জেলা ডিবি পুলিশের এসআই জুলফিকার আলী। তিনি জানান তদন্তকাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

কিন্তু এখনো তদন্ত শেষ না হওয়ায় বিব্রত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। রাজশাহী জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বলছেন, এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলার অগ্রগতি না হওয়াটা দুঃখজনক। পুলিশ অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এজন্য হয়তো সময় লাগছে।

এদিকে, ওইদিন চূড়ান্ত অভিযানের আগে আস্তানা থেকে হুট করে বেরিয়েই জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান আব্দুল মতিনকে। এঘটনা তদন্তে  ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স রাজশাহীর উপ-পরিচালক নুরুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি তার প্রতিবেদন এখনো জমা দেয় নি।

তবে ফায়ারম্যান আব্দুল মতিন নিহতের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম ঘটনার পরদিন সদর দপ্তরে মহাপরিচালকের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠান। তাতে মতিন নিহতের ঘটনায় পুলিশের গাফিলতিকেই দায়ী করা হয়েছে।

জঙ্গিদের হামলায় নিহত মতিন

যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম তদন্ত কমিটি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা প্রথমেই যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলাম, সেটিই চূড়ান্ত। পরে আলাদা করে কমিটি আর তদন্ত করে নি। পানি নিক্ষেপের সময় পুলিশ অ্যালার্ট থাকলে মতিনের মৃত্যু হতো না’।

তবে ফায়ারম্যান মতিন নিহতের পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৩০লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। পরে মতিনের ছোটভাইকে চাকরিও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।


শর্টলিংকঃ