উপাচার্য ‘সরিয়ে’ প্রভাবমুক্ত স্বতন্ত্র রাকসু চায় ছাত্র ফেডারেশন


রাবি সংবাদদাতা:

বৈঠকে ছাত্র ফেডারেশন নেতারা রাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করার জন্য ৮ দফা প্রস্তবনা দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম দু’টি দাবি হলো- ‘গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে উপাচার্যকে সরিয়ে রাকসুর সভাপতি পদেও ভোটের ব্যবস্থা করা এবং ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলের বাইরে করতে হবে।’ তারা চায়- ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম অথবা কোনো অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক।’

রাবি ছাত্র ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে প্রক্টর দপ্তরে বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকে রাকসু সংলাপ কমিটি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন দিয়ে সচল করার লক্ষ্যে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে ‘রাকসু সংলাপ কমিটি’।  বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতরে সংলাপ কমিটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ছাত্র ফেডারেশন নেতারা রাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করার জন্য ৮ দফা প্রস্তবনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম দু’টি দাবি হলো- ‘গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে উপাচার্যকে সরিয়ে রাকসুর সভাপতি পদেও ভোটের ব্যবস্থা করা এবং ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলের বাইরে করতে হবে। তারা চায়- বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম অথবা কোনো অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক।’

তবে এই দু’টি দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সংলাপ কমিটি। এই দাবি দু’টিকে তারা রাকসু এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রণীত ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন। তবে সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পর অধিকাংশদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে কমিটির সদস্যরা।

রাবি ছাত্র ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে প্রক্টর দপ্তরে বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকে রাকসু সংলাপ কমিটি।

ছাত্র ফেডারেশনের অন্য ৬টি দাবি হলো- পরিবেশ পরিষদ গঠন করে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিত, রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত নয় এমন শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন, দ্রুত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা এবং সকল ফি পরিশোধকারীকে ভোটার হিসেবে গণ্য করা, ভোটকেন্দ্রগুলোকে সিসি ক্যামরার আওয়াতায় এনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা, সকল দলের মতামত উপেক্ষা করে ডাকসু’র মতো বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলকে সুবিধা প্রদান না করা, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও সান্ধ্য আইন তুলে দেওয়া।

সংলাপ কমিটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে প্রক্টর দফতরে সংলাপ শুরু হয়। এতে ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি তাসবির-উল ইসলাম কিঞ্জল এবং প্রশসনের পক্ষ থেকে সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে তারা রাকসু নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি তাসবির-উল ইসলাম কিঞ্জল।      ফাইল ছবি।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও সংলাপ কমিটির সদস্য অধ্যাপক মীর ইমাম ইবনে ওয়াহেদ, সহকারী প্রক্টর আবু সাঈদ মো. নাজমুল হায়দার, রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কর্মকার, প্রচার ও প্রচারণা বিষয়ক সম্পাদক ইস্রাফিল আলম, রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মহাব্বত হোসেন মিলন, সদস্য আসমা ঊষা, অন্তু বিশ্বাস, আব্দুস সবুর লোটাস।

বৈঠক থেকে বের হয়ে ছাত্র ফেডারেশন নেতা তাসবির-উল ইসলাম কিঞ্জল বলেন, ‘আমরা ৮টি দাবি জানিয়েছি। এর মধ্যে রাকসু সভাপতি পদে ছাত্র নেতৃত্ব ও হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দ্বিমত পোষণ করেছে। বাকি দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।’

রাকসুর সভাপতি পদ থেকে উপাচার্যকে সরিয়ে ছাত্র নেতৃত্ব চাওয়ার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি কিঞ্জল বলেন, “পদাধিকার বলে ছাত্র সংসদের সভাপতি ‘উপাচার্য’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধানও তিনি। ছাত্র সংসদ তাদের দাবি-দাওয়া জানাতে প্রশাসনিক প্রধানের কাছেই যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান উপাচার্য কী তবে নিজেই নিজের কাছে তখন ছাত্রদের দাবি-দাওয়া পেশ করবেন? এটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাস্যকর।”

দাবির পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘রাকসুর গঠনতন্ত্রে সভাপতিকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তিনি চাইলে যখন খুশি নির্বাচিত কমিটিকে বিলুপ্ত করতে পারেন। এ ব্যাপারে ছাত্রদের আপিল করারও সুযোগ রাখা হয়নি। গঠনতন্ত্রের এ ধারাটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক।’

রাবি ছাত্র ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে প্রক্টর দপ্তরে বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকে পর রাকসু সংলাপ কমিটি।

‘এছাড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন  নিয়ম মেনে উপাচার্যরা নির্বাচিত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ মেনে উপাচার্য নির্বাচনও সিনেটের মাধ্যমে হচ্ছে না। একজন অনির্বাচিত উপাচার্য রাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সভাপতি হবেন কীভাবে? এটি ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারের স্পষ্ট পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করেন তাসবির-উল ইসলাম কিঞ্জল।  সার্বিক বিষয়ে কমিটি চাইলে আবারও আলোচনায় বসতে রাজি ছাত্র ফেডারেশন নেতারা বলে জানান তিনি।

রাকসু সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা যেসব দাবি জানিয়েছে, তার মধ্যে সভাপতি পদে উপাচার্যের স্থলেও ছাত্র নেতৃত্ব ও হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি রাকসুর বিদ্যমান গঠনতন্ত্রবিরোধী। আমরা বলেছি- সকল ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আবারও সংলাপে বসা হবে।’

প্রসঙ্গত, রাকসু নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসার জন্য ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ও নিবন্ধিত ১০টি সংগঠন তাদের গঠনতন্ত্র জমা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু হলো। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে অন্য ৮টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনায় বসবে রাকসু সংলাপ কমিটি। এছাড়াও ক্যাম্পাসে স্বেচ্ছাসেবী, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা করবে এ কমিটি।


শর্টলিংকঃ