কম দামে মাংস বেচা খলিলকে হত্যার হুমকি, গ্রেপ্তার ২


ইউএনভি ডেস্ক:

গরুর মাংসের চড়া দামের মধ্যে কম দামে বিক্রি করে আলোচনায় আসা ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকির দেওয়ার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে শনিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন- মো. নুরুল হক (৬৭) ও মোহাম্মদ ইমন (২২)।বিষয়টি নিয়ে রোববার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে মঈন বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি ঢাকার শাহাজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোন দিয়ে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। সেইসঙ্গে কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুদিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে অকথ্য গালিগালাজ করা হয়।”

এ ঘটনায় খলিল শাহাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করলে তদন্তে নেমে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করার কথা বলেন এই র‌্যাব কর্মকর্তা।গরুর মাংসের দর কেজি প্রতি ৭৫০-৭৮০ টাকা পর্যন্ত ওঠার মধ্যেই গত বছরের নভেম্বরে শাহজাহানপুর বাজারে খলিল গোস্ত বিতানের একটি ব্যানার ভাইরাল হয়। ‘প্রতি কেজি ৫৯৫ টাকা’ লেখা দেখে ক্রেতারা লাইন ধরেন সেই দোকানে। খলিলের দেখাদেখি আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী দাম কমিয়ে দেন। কিন্তু তাতে অন্য ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হন।

দাম কমানোর পরে বিক্রি বেশি হওয়ায় লাভও হচ্ছিল বলে তখন জানিয়েছিলেন খলিল। কিন্তু অন্য ব্যবসায়ীদের চাপে পড়েন তিনি। বিভিন্নভাবে হুমকিও পাচ্ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে খামারি ও মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রতি কেজি মাংস ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু তাতেও একদল মাংস ব্যবসায়ী আপত্তি করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, দাম নির্ধারণের পর বাজারে ‘স্বস্তি’ ফিরলেও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ‘নায্য মূল্যের’ মাংস বিক্রেতাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। কিছুদিন আগেও রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ী খুন হন।

খলিলকে হুমকির ঘটনায় গ্রেপ্তারদের ব্যাপারে মঈন বলেন, নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিশ ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসার করে আসছেন। সেটিকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। কিছুদিন আগে মারামারিও হয়।

“এক ব্যক্তি নুরুলকে বলে, এলাকায় তাকে ঝামেলাহীনভাবে ডিশ ও ইন্টানেটের ব্যবসা করতে দেবে, সেজন্য মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে ফোন করে হুমকি দিতে হবে। এর বিনিময়ে নুরুলের ব্যবসায় কোনো সমস্যা করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।”

মঈন বলেন, “১৮ জানুয়ারি নুরুল মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। সেইসঙ্গে কম দামে মাংস বেচলে হত্যার হুমকি দেন। নুরুলের কথায় খলিলকে গালাগালি করেন গ্রেপ্তার ইমনও। দুদিনের মধ্যে গুলি করে খলিলকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে হুমকি দেওয়া মোবাইল ও সিম কার্ড তারা পানিতে ফেলে দেন।”

নুরুলের নামে আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি ও মারামারির অভিযোগে চারটির বেশি মামলা আছে। আর ইমন দীর্ঘদিন ধরে নুরুলের ডিশ ব্যবসার কাজে সহায়তা করে আসছেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, “নুরুল গরুর মাংসের ব্যবসা করেন না। তবে তার সঙ্গে অনেক গরুর মাংস ব্যবসায়ীর পরিচয় রয়েছে। আর নুরুল তার ডিশ ব্যবসার প্রতিপক্ষ সেলিমকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।”

জানতে চাইলে মাংস ব্যবসায়ী খলিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অকথ্য ভাষায় তারা গালিগালাজ করছিল। ছেলেকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম।”


শর্টলিংকঃ