কৃষি শিল্প স্থাপন ও রেশমে ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের


বিশেষ প্রতিবেদক :

আসছে জুনে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত এই বাজেটে এলাকার উন্নয়নে কী প্রতিশ্রুতি থাকছে তা দেখার অপেক্ষায় রাজশাহীর মানুষ।

রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ চলছে   -আবু সাঈদ

এই জাতীয় বাজেটকে ঘিরে বিপুল প্রত্যাশা জেগেছে শিক্ষানগরী রাজশাহীর মানুষের। বিভাগীয় এই শহরের ‍উন্নয়নে এবারও স্বপ্ন দেখছেন তারা। বলছেন, কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন না হলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে না। প্রয়োজন, রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি রেলযোগাযোগসহ নদীবন্দর স্থাপন। আর ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের জন্য ব্যবসায়ীরা চান বিশেষ থোক বরাদ্দ।

উন্নয়নের মহাসড়কে পিছিয়ে রাজশাহী, গেল ২৫এপ্রিল গণভবনে এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজশাহীর উন্নয়নে হাইটেক পার্কসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন ছাড়া কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে না।

রাজশাহীতে শুরু হয়েছে উড়ালসেতুর কাজ    -আবু সাঈদ

এবিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির রাজশাহী শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন খান বলেন, ধান ছাড়াও আম, টমেটো আলু উৎপাদন হয় এ অঞ্চলে। কিন্তু কৃষক দাম পায় না। কারণ, বিক্রি করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই এগ্রোবেজড শিল্প কারখানা গড়ে তুললে এগুলোর বহুমুখী ব্যবহার বাড়বে। ফলে পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

ব্যবসায়ী নেতারা জানান, শিল্প বা কল-কারখানা গড়ে তুলতে প্রয়োজন বিনিয়োগ। তাই আসন্ন বাজেটে পিছিয়ে থাকা এই এলাকার উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকসুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি তুলেছেন তারা।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি জানিয়েছেন, তারা ৩ থেকে ৫ শতাংশ হারে সুদের হার নির্ধারণ করে রাজশাহীর উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতে সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। কারণ, ঢাকা ও চট্টগ্রামের তুলনায় রাজশাহী ব্যবসা-বাণিজ্যে পিছিয়ে। এজন্য সরকারকে ইনটেনসিভ দেয়া উচিত। শ্রমবান্ধব শিল্প গড়ে না উঠলে কর্মসংস্থান হবে না। আর কর্মসংস্থান না হলে মানুষের ভাগ্যেরও উন্নয়ন হবে না।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি রেলযোগাযোগ স্থাপন জরুরি। তা না হলে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ বাড়বে। গ্যাসের নিশ্চয়তাও দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকেও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানে নমনীয় হতে হবে। তাহলেই কেবল শিল্পায়ন সম্ভব। এজন্য আমরা সরকারের কাছে একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছি।

এদিকে, সরকারীভাবে সিল্ক হ্যাভেন নামে রাজশাহী জেলার ব্র্যান্ডিং হলেও রেশমের শিল্পের উন্নয়নে নেই তেমন বরাদ্দ। কেবল উদ্যোগের অভাবেই লাভজনক এই শিল্প মরছে। তাই এবার বাজেটে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চান এখাতের উদ্যোক্তারা।

রেশমের গুটি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক-ফাইল ছবি

বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এই শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ একটু উদ্যোগ নিলেই সারা বিশ্বের রেশমখাতে বাংলাদেশ তৃতীয়স্থানে উঠতে পারে। নামে মাত্র সুদে তুঁতচাষীদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিলে বছরে ৬বার উৎপাদন সম্ভব। সরকারীভাবে অন্তত ১০০একর জমি বরাদ্দ নিয়েও তুঁত চাষ করা যেতে পারে।

তবে সব ছাপিয়ে এই অঞ্চল থেকে প্রকল্প প্রস্তাবে সংশ্লিষ্টদের অনীহাকে দায়ী করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির রাজশাহী শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন খান। তার অভিযোগ, এখানকার জনপ্রতিনিধিদের আরো আন্তরিক হতে হবে। প্রকল্প পাঠাতে হবে। তদবির করে পাস করাতে হবে। তা না হলে এমনি এমনি উন্নতি হবে না।


শর্টলিংকঃ