কড়াকড়ি শিথিল করে চতুর্থ দফা লকডাউনে স্পেন


ইউএনভি ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের সংকটের কারণে স্পেনে আরোপিত কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হলেও লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৪ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

কড়াকড়ি শিথিল করে চতুর্থ দফা লকডাউনে স্পেন

বুধবার (৬ মে) কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোট হয়। এতে মোট ৩৫০ ভোটের মধ্যে লকডাউনের পক্ষে ১৭৮ ভোট পড়ে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হয়। বিপক্ষে পরে ৭৫ ভোট এবং ৯৭ জন ভোট প্রদানে বিরত থাকেন।এই ভোটের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ওই সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া স্পেনে করোনা মহামারির প্রথম পর্যায়ের সমাপ্ত ঘোষণা করেন তিনি।

বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘আমরা এখন বলতে পারি মহামারিটির প্রথম পর্যায় পেরিয়ে গেছি। তবে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে এবং ভাইরাসের প্রতি আমাদের কঠোর নজর রাখাতে হবে।’

সানচেজ বলেন, মানুষ এতদিন নিয়মবিধি মেনে চলায় তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও মানুষের আচরণের ওপর বর্তমান সংকটের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে।করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্পেনে চলমান জরুরি অবস্থার মেয়াদ চতুর্থ দফায় আবারও বাড়ানো হয়েছে।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী দেশটিতে আরও দুই সপ্তাহ এই স্ট্যাট অব এলার্ট চলবে। দেশের জাতীয় সতর্কতার মেয়াদ আগামী ২৪ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ইউরোপে করোনায় বিপর্যস্ত দেশ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসূ হলে জুন মাসের শেষের দিকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরবে স্পেন।’

এর আগে ১৩ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রথম দফা, ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা, এবং ১৫ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত তৃতীয় দফায় বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। বুধবারের ভোটের পর ২৪ মে পর্যন্ত তা বাড়ানো হলো।

স্পেনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সন্তোষজনক হারে কমেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। ওয়ার্ল্ডোমির্টাস ডট ইনফোর তথ্য অনুসারে স্পেনে জরুরি অবস্থা শুরুর পর থেকে অর্থাৎ ১৪ মার্চের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ ও ৪ মে সর্বনিম্ন ১৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেন।

চলমান জরুরি অবস্থার অনেকগুলো বিষয়ে শিথিলতা এনে সরকার ৪ ধাপের একটি পরিকল্পনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে। ২৬ এপ্রিল থেকে শিশু-কিশোরদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয়ার পর ২ মে থেকে বয়স্কদেরও ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার।

পাশাপাশি সরকারের ৪ ধাপের পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন এবং তা ফলপ্রসু হলে জুন মাসের শেষের দিকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাবে স্পেন- এমন আশার কথা গত ২৮ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্ত করেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্র সানচেজ।

এদিকে লকডাউনের নতুন সময় বাড়ানো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল দেশটির সংবাদপত্র ‘এল পাইস’।

প্রতিবেদনটিতে স্পেনের লা লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জেরার্দো পেরেজের মন্তব্য তুলে ধরে বলা হয়েছে- কংগ্রেসে ‘না’ সমর্থন জয়ী হলে জরুরি অবস্থার কার্যক্রমগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং সরকার জনগণের ওপর ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো চাপাতে পারবে না।

তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপগুলো স্পেনের সাধারণ জনগণের মাঝে সমাদৃত হয়েছে- এমন জনসমর্থন ভোটের জরিপের ফল দেখিয়েছে স্থানীয় টিভি লা সেক্সথা। তবে সব জল্পনা কল্পনার অবসান গটিয়ে অবশেষে কংগ্রেসে সাংসদদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হলেন পেদ্রো সানচেজের দল।

অপরদিকে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানাে হয়েছে, করােনাভাইরাস পুনরায় জন্ম নেয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে দেশটিতে। তবে তা হতে পারে অনেক ছােট পরিসরে। তাই সামনের মাসগুলোর জন্য জরুরি প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথাও বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ স্পেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮২ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫ হাজার ৮৫৭ চন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫৯ জন।


শর্টলিংকঃ