চিকিৎসক সংকটে চার বছর ধরে বন্ধ অপারেশন


কায়ছার প্লাবন, গাইবান্ধা:

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা যন্ত্রপাতি স্টোর রুমে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ২৪টি চিকিৎসক পদের ১৮টিই শূণ্য। একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও বেশিরভাগ সময় অকেজো হয়ে পড়ে থাকে গ্যারেজে। আবাসিক চিকিৎসক না থাকায় সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যায় ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। ফলে সেবা নিতে এসে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন উপজেলাবাসী।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।         ছবি: কায়ছার প্লাবন

জানা যায়, ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা গঠিত। এখানে প্রায় ছয় লাখ মানুষের বসবাস।উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। উপজেলার উত্তরে দিকের শেষ প্রান্ত থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আর দক্ষিণ দিকের শেষ প্রান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল রয়েছে। ফলে নদীর চরের মানুষের একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

২০১৫ সালে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু বাড়েনি চিকিৎসা সেবার মান। উপজেলার এই স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তবে সেবা বঞ্চিত মানুষের মধ্যে ক্রমেই বিতৃষ্ণা বাড়ছে। ফলে হাসপাতাল বিমূখ হয়ে, ফের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা ফিরে যাচ্ছে সনাতন পদ্ধতির মাধ্যমে পানিপড়া, তাবিজ-কবজ আর ঝাঁড়ফুক সেবায়। যা উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সম্পূর্ণ বিপরীতমূখী চিত্র।

সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জরুরী বিভাগ ও বহিঃবিভাগে উপচে পড়া ভিড়। চিকিৎসক সংকটে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে মাত্র ছয়জন মেডিকেল অফিসার। নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। ১৭ জন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। ১৭ জন সহকারি মেডিকেল অফিসারের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র দুইজন। ২২টি নার্স পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন ১৬ জন। সার্জারি চিকিৎসক না থাকায় প্রায় চার বছর ধরে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালে টয়লেটের অবস্থারও বেহাল দশা।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দৃশ্য এটি

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পুরুষ ওয়ার্ডের কয়েকজন রোগী জানান, বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থেকে ঔষুধ কিনে আনতে হয়। চিকিৎসকরা যে ঔষুধ লিখে দেন, তা স্টোর রুমে নেই বলে জানান নার্সরা। হাসপাতালের টয়লেটগুলো প্রচন্ড নোংরা। সেখানে গেলে সুস্থ্য মানুষও দুর্গন্ধে অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হবে। খাবার নিয়েও অভিযোগ করেন তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াকুব আলী মোড়ল বলেন, ‘এখানে প্রয়োজনীয় সংকট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এজন্য একটু গুরুতর হলেই রংপুর মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগীরা এক্ষেত্রে বিপাকে পড়েন। এখান থেকে যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদ প্রায় সবই শূণ্য। সহকারি মেডিকেল অফিসারও নেই। সব মিলিয়ে প্রায় ৭২টি পদ শূণ্য রয়েছে। যারা আছেন, তারা নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করছেন সেবা দিতে।’

হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক বিশ্বেশ্বর চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তাদেরকে মাত্র ৬/৭ জন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দেন। যা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সরকার দ্রুত এখানে মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দিয়ে উপজেলাবাসী ভালো সেবা পাবেন বলে আশা করেন তিনি।


শর্টলিংকঃ