রাবিতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ড. জোহাকে স্মরণ


রাবি সংবাদদাতা:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহার ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জোহার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

ড. জোহার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানে নির্মিত স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা জানান রাবি উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের নেতৃত্বে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে শোকর‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ড. জোহার গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে তারা ড. জোহার স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন ও দোয়া মোনাজাত করা হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে ড. জোহার সমাধিস্থল ‘জোহা চত্বরে’ যায়। সেখানে ড. জোহার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, নিরবতা পালন ও দোয়া মোনাজাত করে।এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম মোস্তাফিজুর রহমান আল আরিফ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী, ছাত্র উদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমূখ।

ড. জোহার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দোয়া মোনাজাত করা হয়।

পরে তারা শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নিরাবতা পালন করেন। এরপরই বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল, শিক্ষক সমিতি, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, অফিসার্স সমিতি, ছাত্রলীগ, রাবি সাংবাদিক সমিতি, রিপোটার্স ইউনিটি, স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এর আগে সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কালো পাতাকা উত্তোলন করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে ‘জোহা স্মারক বক্তৃতা’ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করবেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী। এর আগে অফিসার্স সমিতির কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

‘শিক্ষক দিবসে’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যালি

বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়থনে দোয়া মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্জআলন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

আরও পড়ুন: দাবি ওঠে শুধু শহীদ দিবসেই

এদিকে, ড. জোহার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হলের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় দোয়া মাহফিল ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন উপাচার্য। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ড. জোহার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় রাবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৩ মার্চ বিকেল ৪টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে বড় পরিসরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

জানা যায়, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে রাবির তৎকালিন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পাকিস্তানি সেনারা মিছিলে গুলি করতে উদ্যত হয়। খবর পেয়ে রাবির তৎকালীন প্রক্টর ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের সামনে দাঁড়ান।

শ্রদ্ধা নিবেদন করছে রাবি রিপোটার্স ইউনিটির সদস্যরা

এসময় তিনি পাকিস্তানি সেনাদের গুলি করতে নিষেধ করে বলেন, ‘ডোন্ট ফায়ার! আই সেইড ডোন্ট ফায়ার! এরপর যদি গুলি করা হয়, কোনো ছাত্রের গায়ে লাগার সেই গুলি আমার বুকে লাগবে।’  এক পর্যায়ে তিনি ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন।

কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টন হাদী পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিবিদ্ধ ড. জোহাকে পরে রাজশাহী মিউনিসিপল অফিসে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।


শর্টলিংকঃ