জীবন সায়াহ্নে ‘স্বীকৃতি’ চান ‘মুক্তিযোদ্ধা’ মকবুল


রাবি সংবাদদাতা :

জীবনের শেষ বেলায় এসে সরকারের কাছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মচারী মো. মকবুল হোসেন (৬৫)। তিনি ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধকালে বার্তাবাহক ও টেলিফোন শাখায় কাজ করেছেন বলে জানান। সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের কাছে এ দাবি জানান।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মকবুল হোসেন।

মকবুল হোসেনের জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শরাইলে। যুদ্ধপরবর্তী সময় থেকে নগরীর বোয়ালিয়া থানার মেহেরচন্ডী এলাকায় থাকেন তিনি। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মকবুল হোসেন তার ছেলে আল-আমিনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এলাকায় চায়ের দোকানে কাজ করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মকবুল হোসেন জানান, ১৯৬২ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় ক্যান্টিন বয় হিসেবে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হক, গণিত বিভাগের শিক্ষক আফতাবুল রহিম, রসায়ন বিভাগের শিক্ষক জিল্লুর রহমান ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক এনায়েতুর রহমান মকবুল হোসেনসহ কয়েকজনকে মুক্তিযোদ্ধাদের বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

মকবুল হোসেনের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কাগজ।

পরে তিনিসহ উপাচার্য বাসভবনের মালি গেদু, বাংলা বিভাগের প্রহরী মফিজ, সাবিরুল হক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে চলে যান। ফিরে এসে তিনি ও গেদু ৭ নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর অধীনে বার্তাবাহকের কাজ শুরু করেন। এ ছাড়াও, তিনি রাজশাহী অঞ্চলের টেলিফোন শাখা বিচ্ছিন্নকরণের কাজ করতেন।

মকবুল হোসেন বলেন, ১৮ আগস্ট মুখের ভেতরে বিশেষ বার্তা লেখা কাগজ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় বিনোদপুর গেটে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমিসহ অনেকজনকে চোখ বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেককে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানিরা আমার গলায় গ্রেনেড বেঁধে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরদিন সকালে জেগে উঠে ঘন্টাখানেক পর ভারতীয় বাহিনীর একটি গাড়ি দেখতে পাই। পরে তারা আমাকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সনদ হাতে মকবুল হোসেন।

তিনি বলেন, ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ থেকে অবসর পাই। ২০০৪ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলার চেষ্টা করেছি। ২০১৭ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণ করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে ১৯৭২ সালে ভারতীয় এক ক্যাম্প কমান্ডের ক্যাপ্টেনের দেওয়া টেলিফোন শাখায় কাজের স্বীকৃতিপত্র, ১৯৯৪ সালের ভোটার পরিচয়পত্র, ২০১৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণের কাগজপত্র দেখান।


শর্টলিংকঃ