তামিম নৈপূণ্যে বিপিএলের শিরোপা কুমিল্লার


ক্রীড়া ডেস্ক :

নিজের সেরাটা তাহলে ফাইনালের জন্যই জমিয়ে রেখেছিলেন তামিম ইকবাল? প্রথমে তার অসাধারণ অপরাজিত সেঞ্চুরি! তারপর ফিল্ডিংয়ে দুটো দর্শনীয় ক্যাচ! তামিমময় ফাইনালে জিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ষষ্ঠ বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন।

বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলের উল্লাস।

ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কুমিল্লার ১৯৯ রানের জবাবে ঢাকার ইনিংস থেমে গেলো ১৮২ রানে। ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স মানেই চ্যাম্পিয়ন। চারবারের লড়াইয়ে দু’বার তারা ফাইনালে খেলেছে, দু’বারই চ্যাম্পিয়ন! তবে ছয়বারের বিপিএলে এই প্রথমবার কোন দলের হয়ে তামিম ইকবাল ফাইনালে খেললেন। আর নিজের প্রথমবারের সেই ফাইনালকেই অবিস্মরনীয় করে রাখলেন মাত্র ৬১ বলে হার না মানা ১৪১ রানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে।

জয় নিশ্চিত হতেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ডাগআউট থেকে পুরো দল মাঠে ছুটলো স্প্রিন্টের গতিতে। মাঠের সবাই ছুটলেন ডাগআউটের দিকে! সুভেনির স্ট্যাম্প সংগ্রহের দৌড়াদৌড়িও চললো। মাঠে এবং গ্যালারিতে লাল জার্সির কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ান্সের উৎসবের রঙ তখন লালে লাল! বাতাসে উড়তে থাকা রঙিন কনফেত্তির ফাইনালের এই রাতে অনেক ভিড়ের মধ্যেও একজনকে সবচেয়ে বেশি রঙিন দেখালো; তামিম ইকবাল। এই ফাইনালের রাত যে রাঙিয়েছে তার ক্রিকেট ব্যাট!

কুমিল্লার ১৯৯ রানের পিছু তাড়া করতে নেমে ঢাকা ডায়নামাইটসের শুরুটা হয়েছিলো সত্যিকার অর্থেই বিষ্ফোরণের মতোই! ৬ ওভারেই ১ উইকেটে ৭১ রান। রনি তালুকদার ও উপুল থারাঙ্গা যে গতিতে ব্যাট করছিলেন তাতে স্কোরবোর্ডে কুমিল্লার বিশাল স্কোরকেও নিরাপদ মনে হচ্ছিলো না! তবে থারাঙ্গা ৪৮ ও রনি তালুকদার ৩৮ বলে ৬৬ রান করে ফেরার পর এই ম্যাচে ঢাকার ভরসা ছিলো দুটো নাম; আন্দ্রে রাসেল ও কাইরন পোলার্ড। তবে তামিম ও কুমিল্লার উৎসবের এই রাতে রাসেল ও পোলার্ডও কিছু করতে পারেননি।

ফাইনাল ম্যাচে অসাধারণ সেঞ্চুরি করে দলকে শিরোপা এনে দেন তামিম।

ব্যাটসম্যানদের দাপট দেখানো ফাইনালে কুমিল্লার পেসার ওয়াহাব রিয়াজ বোঝালেন ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা আসলেই অনেক বড় ফ্যাক্টর। নিজের প্রথম ওভারে ১৫ রান খরচা করা ওয়াহাব রিয়াজ পরের স্পেলে করলেন স্বপ্নের বোলিং; ৪ ওভারে ২৮ রানে ৩ উইকেট। তার বোলিং অভিজ্ঞতার কাছেই ভেস্তে গেলো ঢাকার ব্যাটিং পরিকল্পনা।

কুমিল্লার ইনিংসের সময় নিশ্চিতভাবে ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মনে গেলোবারের ফাইনালের দুঃস্মৃতি মনে পড়ছিলো। সেই ফাইনালেও রংপুর রাইডার্স দুুশো ছাড়ানো স্কোর গড়েছিলো। বাঁহাতি ওপেনার ক্রিস গেইল সেঞ্চুরি ও ছক্কার উৎসবে মেতেছিলেন। এবারো ঠিক তাই! শুধু রংপুরের জায়গায় কুমিল্লা। আর ক্রিস গেইলের বদলে তামিমই ইকবাল। দুজনেই ওপেনার। দুজনেই বাঁহাতি! কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের রান উৎসবের এই ফাইনালে ব্যাটিংয়ের সব মৌতাত শুধু তামিম ইকবালকে ঘিরেই।

শুরুটা যেভাবে করেছিলেন তামিম তাতে দেখে বোঝার উপায় ছিলো না কি অসাধারণ কিছু অপেক্ষা করছে তার ব্যাটে! প্রথম ১৬ বলে করলেন মাত্র ২০ রান। পাওয়ার প্লে’র পরই বদলে ফেললেন নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা। যে ব্যাটিং করলেন তাকে আপনি নিশ্চিন্তে বলতে পারেন-বলের সুতো খুলে ফেলা ব্যাটিং! ৩১ বলে ৫০ রান পুরো হলো তার। কিন্তু মাত্র ওটুকুতে সন্তুষ্ঠ থাকতে ফাইনালে খেলেনি তামিম।

উল্লাসিত কুমিল্লা দল

বিপিএলে এটা তার প্রথম ফাইনাল। আর সেই ফাইনালকেই স্মরণীয় করে রাখলেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে। হাফসেঞ্চুরি থেকে সেঞ্চুরিতে গেলেন যেন চোখের পলকে। ৫০ বলে বিপিএলের ইতিহাসে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পুরো করলেন। যাতে ৮টি বাউন্ডারি ও ৭ ছক্কা। টি-টুয়েন্টিতে সেঞ্চুরি তোলার পর সবাই ভাবেন, অনেক হয়েছে। আর তামিমের ভাবনা যেন শুরুই হলো সেঞ্চুরির পর। কোন থামাথামি নেই। সামনে যে বল পাচ্ছেন সমানে পেটাচ্ছেন। বল কখনো বাতাসে ভেসে গ্যালারিতে। কখনো মাটি ছুঁয়ে বিদ্যুৎ গতিতে বাউন্ডারির দড়ি স্পর্শ করছে। নিজের খেলা শেষ ১১ বলে তামিম করলেন ৩৮ রান। যা এলো ৪ ছক্কা ও ২ বাউন্ডারিতে।

তামিমকে থামাতে পারেনি ঢাকার বোলিং। ৬১ বলে হার না মানা ১৪১ রানের তার ঝড়ো ইনিংস এবারের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে চমকপ্রদ ও সেরা ব্যাটিংয়ের দাবিদার। দলের ১৯৯ রানের মধ্যে ১৪১ রানই তামিমের! তাও আবার স্ট্রাইকরেট ২৩১.৫০! ১০ বাউন্ডারি ও ১১ ছক্কায় সাজানো তামিমের এই ইনিংস কুমিল্লাকে ম্যাচের মাঝপথেই চ্যাম্পিয়ন ট্রফির অর্ধেকটা এনে দিলো। ম্যাচের বাকি অর্ধে কুমিল্লা চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে নিয়ে উল্লাসের আনুষ্ঠানিকতা সারলো মাত্র!


শর্টলিংকঃ