দাফনের একদিন পর জীবিত ফিরলো ‘মৃত’ গোলাপী!


বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:

সোমবার (১০ জুন) রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকবাউসা গ্রামের ভুট্টাক্ষেত থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দেওয়ায় তার পরিচয় শনাক্ত করতে বিপাকে পড়ে পুলিশ। তবে পরদিন মঙ্গলবার (১১ জুন) পরিচয় মেলে মৃত নারীর। উপজেলার আড়ানী পৌরসভার পাঁচপাড়া গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মনির হোসেন দাবি করেন- উদ্ধারকৃত লাশটি তার স্ত্রীর।

পরিবারের অন্য সদস্য এবং স্থানীয়রাও একই দাবি করার পর পুলিশ লাশটি মনির হোসেনের স্ত্রী হিসেবে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে মঙ্গলবার (১১ জুন) সন্ধ্যার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে লাশটি দাফনও করা হয়।

এদিকে, আজ বুধবার (১২ জুন) সকাল ১০টার দিকে আড়ানী স্টেশনে বসে থাকতে দেখা যায় মৃত ভেবে দাফন সম্পন্ন করা গোলাপী বেগমকে। স্থানীয় কয়েকজন তাকে সেখান থেকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। সেখানে ডাকা হয় গোলাপী বেগমের মামা শাকিব হোসেন, শ্বাশুড়ি মরিয়ম বেগম, ভাসুর মাজদার রহমান, জা সাজেদা বেগমকে। তারা সকলেই গোলাপীকে ‘আসল গোলাপী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে ভিড় করতে শুরু করেন। পরে পুলিশ গোলাপী বেগমকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য বিষয়ও যাচাই-বাছাই শেষে তাকে আসল গোলাপী বেগম হিসেবে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

জানতে চাইলে গোলাপী বেগম বলেন, ঈদের আগের বুধবার (২৯ মে) আমি হাটে গরু বিক্রি করে ৪২ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা শ্বশুরবাড়ির লোকজন জোর করে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। আমার স্বামী প্রতিবন্ধি হওয়ায় তার টাকা-পয়সা মা-বাবা নিয়ে নেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমি বিদ্যুৎ বিল দেয়ার নাম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে রাজশাহী শহরে চলে যায়। সেখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম। আমার ছয় বছরের ছেলে রয়েছে। আমি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্বা। আজ বুধবার (১২ জুন) যখন ফিরে আসি। সঙ্গে সঙ্গে এলাকার মানুষ আমাকে ঘিরে ধরে, বলে তুমি তো মরে গেছো? বেঁচে আসলে কীভাবে? তুমি গোলাপীই তো!’

গোলাপী বেগম জানান, তাদের প্রশ্ন করা শুনে আমি অবাক হয়ে যায়। পরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা শুনেছি।

গোলাপী বেগমের শ্বশুর বিচ্ছাদ আলী বলেন, আমার ছেলে বাকপ্রতিবন্ধি হওয়ায় তার বউ খেয়াল-খুশি মতো চলাফেরা করে। ঈদের আগে হঠাৎ উধাও হয়ে গেছিল। খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই ওই লাশ দেখে আমরা ভেবেছিলাম- এটা হয়তো গোলাপী হবে। কিন্তু তা সঠিক হয়নি।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন আলী বলেন, উদ্ধারকৃত লাশটি ভুলভাবে শনাক্ত করেছিল তার আত্মীয়-স্বজনরা। যাকে মৃত ভেবে দাফন করা হয়েছে, আসলে সেই নারী জীবিত? এখন প্রশ্ন- তাহলে মৃত নারী কে?

তিনি আরও বলেন, লাশ দাফন করা হলেও আমাদের কাছে আলামত ও ছবি রয়েছে। তা নিয়ে তদন্ত শুরু করা হবে। ওই ঘটনার দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত করে নারীর পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডের ক্লু খুঁজে বের করা হবে।


শর্টলিংকঃ