নির্মাণকাজে অনিয়ম: বাঘা-আড়ানী সড়কের কাজ বন্ধ করেছে এলাকাবাসী


বাঘা (রাজশাহী ) প্রতিনিধি:
অনিয়মের অভিযোগে  রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাঘা-আড়ানী সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর বাধার মুখে বুধবার থেকে এই রাস্তার কাজ বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার সড়কের নির্মাণকাজে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়।


এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী সরেজমিনে বাঘা-আড়ানী সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে আসেন। তিনি এসেই বলেন, রাস্তায় যে বালি ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিম্নমানের। পরে ল্যাবে গবেষণাগারে পরীক্ষানিরীক্ষায় ধরা পড়ে শুধু বালিই নিম্নমানের নয়, বালি ও পাথরের অনুপাত ও সঠিক ছিল না।

দুপুর সাড়ে ১২ টায় সড়কের নির্মাণকাজের পরীক্ষার সময় বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনের রাস্তায় রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা, নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন, ঠিকাদার হারুন-অর-রশিদ, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীনসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

তাদের অভিযোগ ছিল কাজে নিম্নমানের বালি ব্যবহার করা হচ্ছে, দরপত্রের বর্ণিত বালি ও পাথরের অনুপাত মানা হচ্ছে না, পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে না, এবং কার্পেটিংয়ের আগে বালি পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এ সময় অভিযোগকারীদের সরানোর জন্য ঠিকদারের প্রতিনিধি চাঁদা চাওয়ার কথা বলে বাঘা থানায় খবর দিয়ে পুলিশ নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। এ সময় ওই রাস্তা দিয়ে বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন যাচ্ছিলেন।

স্থানীয় লোকজন তাঁর কাছেও এই অভিযোগ করেন। তিনি সেখান থেকে (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন করে অভিযোগের বিষয়টি অবহিত করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী ওই অবস্থায় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার ওই সড়ক পরিদর্শন করবেন বলে আশ্বাস দেন।


(সওজ) সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ‘বাঘা-আড়ানী’ সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে। এই কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। কাজটি পেয়েছে যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মইনুদ্দীন বাঁশি। মাঠ পর্যায়ে ঠিকাদারের অংশীদার রাজশাহীর হারুন-অর-রশিদ কাজটি করছেন। এ রাস্তার নিমার্ণকাজের আর প্রায় দেড় কিলোমিটার বাকি রয়েছে।

এখন কাজ চলছে বাঘা পৌর এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে। গত বুধবার রাস্তার নিমার্ণকাজ চলাকালে সওজ এর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় স্থানীয় জনগণ কাজের অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেন।

স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, পুরো রাস্তাটিই এইভাবে করা হয়েছে। তারা কোনো আপত্তি করেননি। কিন্তু বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের জায়গাটিতে পানি জমে তাড়াতাড়ি রাস্বতা নষ্ট হয়ে যায়। তারা এই এলাকার রাস্তাটুকু সঠিকভাবে করার আবেদন জানিয়েছিলেন। সেখানেও অনিয়ম করার কারণে তারা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই পাথরের সঙ্গে যে বালি মেশানো হয়েছে তা নিম্নমানের বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু তাঁর উপস্থিতিতেই সেই বালির ওপরেই নির্মাণ শ্রমিকেরা কাজ করতে থাকেন। উপস্থিত বাঘা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শাহবাজ উদ্দিন বলেন, প্রকৌশলী যে বালিকে নিম্নমালের বলে মন্তব্য করেছেন, এতদিন রাস্তায় যে বালি ব্যবহার করা হয়েছে, তা এর চেয়ে আরও নিম্নমানের ছিল।

প্রকৌশলী স্থানীয় জনগণের অভিযোগ শোনেন। তিনি বলেন, কোনো মুখের কথা শোনা হবে না। তাদের ল্যাবে (গবেষণাগারে) বালি ও পাথরের অনুপাত পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় যদি অনুপাতের কোনো গড়মিল পাওয়া যায় তা হলে ঠিকাদারকে দিয়ে আবার রাস্তা ঠিক করে নেয়া হবে। উপস্থিত ঠিকাদার হারুন অর রশিদও তাই বলেন।

কিছুক্ষণ পরেই (সওজ) এর গবেষণাগারের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে এসে রাস্তা খুঁড়ে পাথর ও বালির অনুপাত নির্ণয় করেন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৭০ ভাগ পাথর ও ৩০ ভাগ বালি থাকার কথা। কিন্তু পরীক্ষায় ৬০ ভাগ পাথর ও ৪০ ভাগ বালি পাওয়া গেছে। তবে পরীক্ষার সময় উপস্থিত লোকজন বলেন, তারা বালি-পাথরের অনুপাত সমান সমান দেখেছেন।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারের প্রতিনিধি সেকেন্দার আলী ‘অল্প জায়গায় এই অনিয়ম হয়েছে দাবি করে বলেন, মাল মিক্সার করে রিমুভ করে ঠিক করে দিব।’ এ ব্যাপারে মিজানুর বলেন, বালির আর্দ্রতা বাদ দিতে হবে। সেটা বাদ দিলে বালির অনুপাত ৪০ ভাগেই এসে দাঁড়াবে। যেভাবে পারেন ঠিকাদার এখন এটা ঠিক করে দেবেন।
তবে পরীক্ষার পর নির্বাহী প্রকৌশলীর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, গবেষণাগারের পরীক্ষক মিজানুর রহমান যা বলেছেন সেটাই সঠিক। ঠিকাদার রাস্তার কাজ ঠিক করে দেবেন।’


শর্টলিংকঃ