পদ্মার চরে আপেল কুলের বাম্পার ফলন


নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী:

পদ্মার চরের একটি কুল বাগান।

বাঘা উপজেলার পদ্মার চরের মধ্যে নবগঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এ চরে আপেল কুলের চাষ এনে দিয়েছে নতুন বিপ্লব। রোদ আর বালুর কারণে বছরের পর বছর পদ্মার চরে ৫ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমি অনাবাদী ছিল। বর্তমানে এ জমিতে পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, সরিষা, আখ, ধান, হলদু, আদা ও শাকসবজির পাশাপাশি চাষ হচ্ছে আপেল কুল।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পদ্মার চরে কুল চাষে আত্মনিয়োগ করেছে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা। পতিত জমিতে বরই চাষ করে একদিকে চাষিরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন। কম খরচে বেশি লাভের আশায় পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন এলাকায় আপেল, বাউ ও থাই জাতের কুল চাষ করে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছে।

চরের কুলচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালুযুক্ত পদ্মার চরে একসময় অন্য ফসল করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বর্তমানে এ পদ্মার চরে কুল চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে শফিকুল ইসলাম, বাঘা পৌর মেয়র আবদুর রাজ্জাক, জামাল উদ্দীন, সোনা মিঞা, ইউসুফ আলীর মতো অনেকে। পদ্মার চরে এখন সোনার ফসল ফলানো যায়, তা প্রমাণ করছেন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা।

শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, আমি পদ্মার চরে ১০৪ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। তবে বিঘাপ্রতি গড় উৎপাদন আশা করছি ১৩০ মণ। চলতি মৌসুমে প্রায় এক কোটি টাকার কুল বিক্রির আশা করছি।

বাঘা পৌর মেয়র আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত মৌসুমে প্রথম দিকে আপেল কুলের বাজার ছিল প্রতিমণ এক হাজার ৫০০ টাকা। মাঝামাঝি সময়ে তা কমে এক হাজার ২০০ টাকায়। তবে বাউ ও থাই কুলের বাজার ভালো ছিল। আমি ৩০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কুল চাষ করেছি।

গড়গড়ি গ্রামের জামাল উদ্দীন ৪০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন বলেন জানান। এই মৌসুমে গাছে ভালো কুল আছে। দাম ভালো আশা করছেন। বাউসা গ্রামের মুনজু সরকার সমতল জমিতে ২০ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। তিনি এমএ পাস করে কৃষিকে পেশা হিসেবে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন বলেন জানান।

আরেক কুলচাষি সোনা মিঞা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় সফল হয়েছি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানকার কুল বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন।

উপজেলার বাউসা সরকারপাড়া গ্রামের মিঠুন আলী বলেন, আমি ধান, পেঁপে, কলা ও গরুর খামারের পাশাপাশি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গত মৌসুমে মাত্র ১৬ শতাংশ জমিতে আপেল কুল চাষ করেছি। এই মৌসুমে প্রায় অর্ধ লাখ হাজার টাকার কুল বিক্রির আশা করছি। তবে আমার কুল বাগান দেখে এলাকার অনেকে কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা সামিমুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় দুই শতাধিক হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মার চরে বেশি চাষ হয়েছে। তবে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি আর্থিকভাবে কুল চাষেও আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। কুল চাষের গবেষণা চালিয়ে উন্নত জাত সৃষ্টি করে আবাদ করলে আমের মতো বিদেশে রফতানি করে অর্থনৈতিকভাবে চাষিদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করবে।#

প্রতিনিধি/আ.


শর্টলিংকঃ