পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের কাছে জিম্মি রোগিরা


আবু হাসাদ, পুঠিয়া:

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে নানা বিধি সমস্যায় এখন স্বাস্থ্য সেবার মান ভেঙ্গে পড়েছে। তার উপর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্লিনিক-প্যাথলজির নিয়োগকৃত অর্ধশতাধিক দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন রোগী ও তাদের সাথে আসা স্বজনরা।

অভিযোগ উঠেছে দালাল চক্রটি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্বক্ষনিক হাসপাতলের সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছে। এ সকল বিষয় গুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবহিত হওয়ার পরও রহস্যজনক কারণে দালালদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যে ঢাকা-রাজশাহীর ২৭ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার রোগীরা এখানে আসেন। এছাড়া পুঠিয়া উপজেলা, চারঘাট, বাগাতিপাড়া ও দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় দু’লাখ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে।

এই কমপ্লেক্স ঘিরে গত কয়েক বছরে উপজেলা সদর এলাকায় ব্যঙের ছাতার মত যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ক্লিনিক-প্যাথলজি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এর মধ্যে বেশীর ভাগ চলছে অবৈধ ও ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে। প্যাথলজি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার মালিকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আসা সাধারণ রোগীদের দেয়া প্রতিবেদনে বিভিন্ন চিকিৎসকের ভূয়া সীল মেরে প্রতারিত করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের গেইট থেকে শুরু করে জরুরী বিভাগ, বহিঃবিভাগ ও রোগিদের ওয়ার্ড পর্যন্ত কয়েকটি স্তরে দালালরা অবস্থান করছে। তারা আশে পাশের বিভিন্ন ক্লিনিক-প্যাথলজির নিয়োগকৃত কর্মচারী। এর মধ্যে বেশীর ভাগ দালাল রয়েছে মহিলা। জরুরী বিভাগের সামনে ৪/৫ দালাল অবস্থান করলেও বর্হি বিভাগের প্রতিটি কক্ষের দরজার পাশে দু’জন ও চিকিৎসকের পাশে একজন করে দাড়িয়ে থাকে। বিনিময়ে ওই দালালরা সময়মত চিকিৎসকদের ফ্রিতে বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করছে।

এরপর কোনো রোগি চিকিৎসকের দরজার সামনে আসলেই রোগের বিবরণ না শুনেই একটি চিরকুটে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার আদেশপত্র দেন। ওই টিরকুট নিয়ে রোগি বাহিরে আসার আগেই অল্প টাকায় ভালো পরীক্ষা করিয়ে দেয়ার প্রলোভনে দালালরা টানা হেচড়া শুরু করে। রোগিদের অসহায়ত্বের সুযোগে ওই দালালরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ইচ্ছেমত টাকা আদায় করছে।

চারঘাট উপজেলার বালাদিয়াড় এলাকা থেকে আগত নুরনাহার বেগম নামে এক রোগীর অভিভাবক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার ৮ বছরের ছেলে গত কয়েকদিন থেকে পেটের ব্যথায় ভুগছে। এই হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন।

আমরা ডাক্তারের ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই একজন মহিলা আমার হাত থেকে ওই কাগজ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে তার পিছনে আসতে বলে। আমি যেতে না চাইলে সে আমাদের নিয়ে যেতে টানাটানি শুরু করে। বিষয়টি ওই চিকিৎসকে জানালে তিনি বলেন “ওর সাথে চলে যান কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া হাসপাতালে আগত বেশীর ভাগ রোগীদের প্রায় একই অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে জরুরী বিভাগের একজন সহকারী চিকিৎসক বলেন, দালালদের অত্যাচারে অনেক সময় রোগীরা বিরক্ত হয়ে উঠেন। স্থানীয় দালালদের প্রভাবের কারণে আমরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমা আখতার বলেন, হাসপাতালে দালাল আছে আমিও জানি। তবে কারা এখানে দালালি করে বা রোগিদের টানা হেচড়া করছে তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের সকল স্টাফদের বলে দিয়েছি হাসপাতালে যেনো কোনো দালাল আসতে না পারে।


শর্টলিংকঃ