বিশ্বকবির জন্মদিনে পতিসরে বর্ণাঢ্য আয়োজন


কাজী কামাল হোসাইন, নওগাঁ:

‘যখন পড়বে না মোড় পায়ের চিহ্ন এই বাটে/ আমি বাইব না, আমি বাইবনা মোর খেয়া-তরী এই ঘটে গো।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গান মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাঁর খেয়া-তরী এই ঘটে থাক বা না থাক তবুও পতিসরে তাঁর কন্ঠ যেন আজও বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাঁর খেয়া-তরী মানুষের মনের গভীরে বাঁধা পড়েছে।

আজ ২৫ বৈশাখ উদযাপিত হবে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮ তম জন্মোৎসব। ঝাড়মোছ করা হয়েছে পতিসর কাছারী বাড়ির বাহির-অন্দরে। সেজেছে দেবেন্দ্র মঞ্চ।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নে কালীগ্রাম পরগনার নিজস্ব জমিদারী পতিসরে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারী বাড়ি। কবির জন্মোৎসবকে ঘিরে সেখানে নামবে বরীন্দ্র ভক্তদের ঢল। অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসাবে উদ্বোধন করবেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি। কর্মসূচি মধ্যে রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মময় জীবন ও স্মৃতি নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষ্যে সেখানে বসবে গ্রামীন মেলা।

কবি প্রথম পতিসরে আসেন ১৮৯১ সালের ১৩ জুন। শেষ বিদায় নিয়েছিলেন ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই। কবি বহুবার এসেছেন তার নিজস্ব জমিদারী কালিগ্রাম পরগনার পতিসর কাছারী বাড়িতে নাগর নদী পথে বজড়ায় চড়ে। এই পতিসরে বসে কবি রচনা করেছেন কাব্য নাটিকা , বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাহিরে।

ছোট গল্পের মধ্যে প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা ও ভারতবাসী প্রবন্ধ। গানের মধ্যে যেমন “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা/ তুমি আমার নিভৃত সাধনা,” বধূ মিছে রাগ করোনাসহ অনেক গান। দুই বিঘা জমি, আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে—, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ—ইত্যাদি কবিতা সবগুলো করেছেন মাটি ও মানুষের জন্য। তিনি বিভেদমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক দেশ ও জাতী গড়ে তুলবার চেষ্টা করেছিলেন।

কাছারী বাড়ির যাদু ঘরে সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে কবির দেয়াল ঘড়ি, লোহার সিন্দুক, খাট, টি-টেবিল, টি-পট, আয়না, নাগর বোটের এ্যাংকর, ট্রাক্টরের ভগ্নাংশ, কবির স্নানের বাথটাব, কবির বিভিন্ন বয়সের ছবি, ইজি চেয়ার, কৃষি ব্যাংকের লোহার সিন্দুক, কবির স্বহস্তে লিখিত ৬ পৃষ্ঠার চিঠিসহ নানান সামগ্রী।

অধ্যক্ষ (অবঃ) ও রবীন্দ্র গবেষক প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ নওগাঁর মানুষের কাছে গর্ব। কারন তার নিজস্ব জমিদারী আত্রাই উপজেলার কালিগ্রাম পরগনা। রবীন্দ্রনাথ শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তার ছেলের নামানুসারে রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউট খুলেছিলেন। নওগাঁবাসীর দাবী, রবীন্দ্রনাথের নামে পুনাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের নামে যত জমি আছে, সেই জমির উপরেই বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব। রবীন্দ্রনাথ নওগাঁর মানুষের কাছে, হৃদয়ের মানুষ, কাছের মানুষ। তার নবেল প্রাইজের অর্থ দিয়ে কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন, ক্ষুদ্র ঋনের ব্যবস্থা তিনিই চালু করেছিলেন।

পতিসরে বেড়াতে এসছিলেন মাহমুদা খাতুন সিদ্দিক তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথে সব জায়গাগলো খুবই ভাল লাগে। তার সব জায়গায় যাওয়া আছে আমার। আমি রবীন্দ্র প্রেমী মানুষ প্রতিবছরই আসি। জায়গাগুলি আরও সংস্কার করলে আরও ভাল হতো।

পর্যটক ও রবীন্দ্র ভক্ত তানভীর অপু বলেন, আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৬৭৫টি শহর ঘুরেছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে যে দেশে ঘুরেছেন সেই সেই দেশের সরকার সেখানকার রুম ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে রেখেছে। স্মৃতি ধরে রাখতে তার নামে রাস্তা ও রবীন্দ্র প্রকিকৃতি নির্মান করেছে। তিনি শুধু কবিই না ভ্রমন গুরু বলা যায়। এখানে এসে খুবই ভাল লাগছে। আমি মুগ্ধ। কবি গুরুর নাগর নদী কোন ভাবেই যাতে বেদখল না হয়ে যায় সেই দাবী রাখছি।

রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক ও রবীন্দ্র অনুরাগী মতিউর রহমান মামুন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ৪৬ বছরে আসা যাওয়ার মাধ্যমে যে স্মৃতিগুলো রেখে গিয়েছিল সেগুলো জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরপরই হারিয়ে গেছে। সরকারের নিকট অনুরোধ বিশেষ তহবিল গঠন করে স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করে পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম করার দাবীসহ কবির স্মৃতি বিজড়িত নাগর নদী অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষা দাবি জানান।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, কবিগুরুর ১৫৮তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে নওগাঁর পতিসরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালায় থাকছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীন মেলা। প্রধান অতিথি থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। ইতি মধ্যেই আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি- উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি পালিত হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।


শর্টলিংকঃ