পাবনার একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানুর খবর নেয় না কেউ


অর্থাভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারছেননা দরিদ্র সন্তানরা

কলিট তালুকদার, পাবনা:
নারী হয়েও দেশ মাতৃকার স্বাধীকার আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভানু নেছা (৮০)। কিন্তু ভাল নেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী তালিকাভুক্ত এই নারী মুক্তিযোদ্ধা।

ভানু নেছা

দীর্ঘদিন হলো তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। চলাফেরা করতে পারেন না। এর মধ্যে ছয় মাস আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। বর্তমানে নিজ বাড়িতে ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অর্থাভাবে মায়ের সুচিকিৎসা করাতে পারছেননা ভানু নেছার দরিদ্র সন্তানরা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালে মহান মক্তিযুদ্ধে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোলা-বারুদ মাথায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কারে বাঙ্কারে পৌঁছে দিতেন তিনি। একবার তিনি গুলিতে আহতও হয়েছিলেন। যার ফল স্বরুপ তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং নিয়মিত ভাতা প্রাপ্ত পান।

১৯৯৬ সালে পাবনায় ও ঢাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে তাঁকে সম্মানিত করা হয়। তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। কিন্ত এখন জীবনের এই শেষ সময়ে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। এখন আর কেউ তাঁর খবর নেয়না। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের তেথুঁলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভানু নেছার স্বামী আব্দুল প্রামাণিক মারা যান কয়েক বছর আগে। ভানু নেছার দুই ছেলে দিনমজুরের কাজ করেন। মায়ের সরকারি ভাতা এবং নিজেদের সামান্য আয় দিয়ে কোনমতে চলে তাদের সংসার। তাই অর্থাভাবে মায়ের সুচিকিৎসা করতে পারছেননা ভানু নেছর দরিদ্র ছেলেরা।

ভানু নেছা
ভানু নেছার দুই ছেলে ইউনুস আলী ও শহিদুল ইসলাম জানান, তার মা বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। তাকে কোলে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে হয়। ইশারায়, আকার-ইঙ্গিতে কথা বলেন। তার শরীর খুব দূর্বল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে আছেন। ছয় মাস হলো ঠিকমতো খেতে পারেন না। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু চিকিৎসা করানোর টাকা তাদের নেই।

সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল লতিফ জানান, একাত্তরে নন্দনপুরে যখন পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমরা বাঙ্কারে ছিলাম। ঠিক ওই সময় এই ভানু নেছা আমাদের অনেকভাবে সহযোগিতা করেছিল। আমাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে আমি তাকে চিঠি লিখে সাঁথিয়া থানায় গিয়ে গোলাবারুদ আনতে বলেছিলাম। তখন সে মাজায় কাপড় বেঁধে থানা থেকে গোলাবারুদ নিয়ে আমাদের দিয়েছিল।

নন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস জানান, মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা ছিলেন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সাঁথিয়া স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত সতীর্থ পুরুষ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রনাঙ্গণে ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের এই অকুতোভয় সৈনিক। তিনি আজ শয্যাশায়ী। অর্থাভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আমরা মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের বর্তমান সরকারকে ভানু নেছার চিকিৎসায় ব্যবস্থা গ্রহণের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জামাল আহমেদ জানান, আমি ইতিমধ্যে তার খোঁজখবর নিয়েছি। তার বাড়িতে গিয়ে তাকে দেখেছি। মুলত তিনি বয়সের ভারে ন্যুজ্ব হয়ে পড়েছেন। তারপরও প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অবশ্যই তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তাৎক্ষনিকভাবে পরিবারকে নগদ কিছু অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন  নিম্নমানের ইট ব্যবহারে বাধা দেয়ায় প্রকৌশলীকে পেটালো ঠিকাদারের ছেলে


শর্টলিংকঃ