মান্দায় ৭টি বাঁধ ভেঙে পানিবন্দী হাজারও মানুষ


কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:

গত কয়েক দিনের একটানা প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বিপসীমার উপরদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনাসহ প্রায় সবকটি নদীর পানি। নওগাঁর মান্দা উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে এখন বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত মান্দায় ৭টি বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন সরকারী সাহায্য পৌঁছেনি। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বন্যার কবলে পড়ে আত্রাই ও রাণী(ফকিরনি) নদীর উভয় তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৫০ টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

ইতিমধ্যে এ দুই নদীর উভয় তীরের ৭টি বেড়িবাঁধ ও জোকাহাট দাসপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। এসব বন্যা দূর্গত এলাকার মানুষজন গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ বাধতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বোচ্ছাসেবকরা প্রানপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙনকৃত বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ জোকাহাট দাসপাড়া, বেড়িবাঁধগুলো হচ্ছে পার-নুরুল্লাবাদ মন্ডলপাড়া, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি ও বাইবুল্যা। বুধবার এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ধান, পাট ও সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।

এর মধ্যে ২০১৭ সালের বন্যায় চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আর মেরামত করা হয়নি। এতে করে নদীর পানি বাড়ার ফলে এসব ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে দুই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানির প্রবল চাপে আত্রাই ও রানি নদীর উভয় তীরের বনকুড়া, দক্ষিণ চকবালু, জোকাহাট, চকরামপুর, উত্তর চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া, নুরুল্লাবাদ নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোতবাজার, বাগাতিপাড়া, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, শামুকখোল, লক্ষীরামপুরসহ অন্তত: ৫০ টি পয়েন্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিনরাত কাজ করছেন স্থানীয়রা। বাঁধে রাতে বসানো হয়েছে পাহারা। এছাড়া কালিকাপুর, ফেরিঘাট, কয়াপাড়া, কামাকুড়ি, দোসতি প্রসাদপুরবাজার, পাজরভাঙ্গা, পলাশবাড়িসহ আরো বেশকিছু এলাকা ভাঙনের উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা আত্রাই নদীর ডান তীরে পারনুরুল্লাবাদ থেকে মিঠাপুর পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাত্র এক ফুট নিচে পানি অবস্থান করছে। কোথাও কোথাও মূল বাঁধ টপকে পানি পার হচ্ছে। বালুর বস্তা ফেলে পানি ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা ।


শর্টলিংকঃ