রাজশাহীতে মৃত্যুঝুঁকির মতো সংক্রামক বর্জ্যের স্তুপ সড়কে


জিয়াউল গনি সেলিম :

প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বর্জ্য ফেলা হচ্ছে জনবহুল খোলা জায়গায়। এতে নানা মৃত্যুঝুঁকির মতো সংক্রমণ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।  অন্তত একহাজার ৬০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার চুল্লিতে বা ইনসিনারেটরে গলিয়ে ধ্বংস করা কথা।  অথচ এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই স্বাস্থ্য বিভাগের।

এভাবেই খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে মেডিকেলের বর্জ্য – আবু সাঈদ

রাজশাহী নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাহেববাজার-কোর্ট সড়ক। এ সড়কের নিউ গভ ডিগ্রি কলেজ ও কেন্দ্রীয় কারাগারের সীমানার পশ্চিম  পাশে খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে মেডিকেলের বর্জ্য। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জড়ো করা হয় প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বর্জ্য।এতে এ সড়কে চলাচলকারীসহ স্থানীয়রা পড়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

স্থানীয়দের অভিযোগ,  এ জায়গার চারপাশেই লোকজনের সমাগম থাকে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি। আবাসিক এলাকাও এটি। এছাড়া প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত মানুষ চলাচল করে। অথচ সড়ক ঘেঁষেই খোলাস্থানে এসব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে অবাধে। ফলে দুর্গন্ধে  চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও ব্লেডসহ তেজস্ক্রিয় বস্তু থেকে সংক্রমণের মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস… এমন কি ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েছে। এ কাজে নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্যও নিরাপত্তাহীন। অথচ এ নিয়ে প্রতিবাদ করে কোনো ফল হচ্ছে না-বলেও অভিযোগ।

বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি মো. জামাত খান  বলেন,  খোলা জায়গায় ফেলা রোগীরদের ব্যবহৃত সুঁই, সিরিঞ্জ, গজ-ব্যান্ডেজসহ অপরেশনের বর্জ্যগুলো খাচ্ছে নানা পশুপাখি। বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল ও পাখির মাধ্যমে এগুলো ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মাঝেও। এনিয়ে সিভিল সার্জন ও সিটি কর্পোরেশনের কাছে বার বার অভিযোগ করা হলেও তারা উদাসীন।

রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ধারালো জিনিস ও বর্জ্য সড়কের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে -আবু সাঈদ

মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৮ অনুযায়ী, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বর্জ্য অপসারণে কারিগরি সহায়তা দেয়া কথা স্বাস্থ্য বিভাগের। কিন্তু তারও হদিস নেই। এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় শহর হলেও এখানে উচ্চ তাপমাত্রার চুল্লি বা ইনসিনারেটর নেই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে একটি  ইনসিনারেটর  ছিল। সেটিও দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট।  তবে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি  দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে, যেন তা তারা পরিবেশ নষ্ট না করে।

নগরীর সাহেববাজার-কোর্ট সড়কের পাশে ফেলা মেডিকেল বর্জ্য – আবু সাঈদ

তবে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী  শাখার সাধারণ সম্পাদক মুখলেসুর রহমান শাহ্  অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে ৩/৪ কাঠা জায়গা আমরা  চেয়েছি। জায়গা পেলেই আমরা নিজ খরচেই ইনসিনারেটর বসাবো। তখন আর এ সমস্যা হবে না। কিন্তু উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় খোলা জায়গাতেই আপাতত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুনের দাবি, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার মালিকরা জায়গা চেয়ে  আমাদের কাছে কোনো আবেদন  করেন নি। তবে তারা জায়গা চাইলে এ বিষয়ে উদ্যোগ  নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ