রাজশাহী অঞ্চলের দেড়শ’ গডফাদারের তালিকা চূড়ান্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী অঞ্চলের মাদকে জড়িত এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও গডফাদারদের তালিকায় অন্তত দেড়শ’ ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের নির্দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এই তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় আছে খুচরা ব্যবসায়ীররাও। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, মাদক কেনাবেচায় অবৈধপথে টাকা লেনদেনের প্রমাণ মিললে মামলা হবে মানিং লন্ডারিং আইনে।

জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চল দেশের মধ্যে সর্বাধিক মাদকপ্রবণ এলাকা। এই অঞ্চলের অন্তত শতাধিক সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেশে ভারত থেকে মাদক আসে। এসব মাদক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বছরব্যাপী লাগাতার অভিযান সত্ত্বেও রাজশাহী অঞ্চলে মাদকের চোরাচালান কয়েকগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি যথেচ্ছ মাদক বিক্রি ও সেবনের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মাদককেন্দ্রিক সামাজিক সমস্যা সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে।

সূত্রমতে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে সক্রিয় মাদক কারবারি, অর্থলগ্নিকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করতে তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন ও তথ্য সন্নিবেশের (ডাটাবেজ) জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। বিভাগীয় দপ্তরগুলো থেকে গেল এপ্রিলে এ তালিকা চাওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে।

রাজশাহী মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপপরিচালক মো. লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, মাদক কারবারিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা ছাড়াও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি, হালনাগাদ ছবি সংগ্রহ করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এছাড়া তাদের বর্তমান অবস্থান, আগের পেশা ও বর্তমান অবস্থান, বর্তমানে সম্পদের সম্ভাব্য পরিমাণ ও তালিকা, বাড়ি, গাড়ি, জমিজমা, রাজনৈতিক পদ-পদবি, বিদ্যমান অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলে, তার ধরন ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরেও পাঠানো হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, সন্দেহভাজন ও প্রমাণিত মাদক কারবারিদের এনআইডির কপি নেওয়ার কারণ তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা। তাদের অতীত সম্পর্কে তথ্য সন্নিবেশ রাখা। সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন মাদক কারবারি ধরা পড়ার পর অনেক সময় ভুল নাম-ঠিকানা দিয়ে থাকে। মামলা তদন্তে গিয়ে ব্যক্তির দেওয়া ঠিকানায় তাকে শনাক্ত করা যায় না। আবার জামিনে বের হলে তাকে আর পুলিশ খুঁজে পায় না। তার বিরুদ্ধে অতীতে কোনো মাদকের মামলা আছে কিনা তাও জানা সম্ভব হয় না। এই ডাটাবেজের কাজ সম্পন্ন হলে এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।

এবিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, অবৈধ পথে আসা মাদক কেনাবেচার টাকা পাচার হয়ে যায় বিদেশে। এই ডাটাবেইজের মূল উদ্দেশ্য হলো গডফাদারদের চিহ্নিত করা। কারণ, তারাই মূলত বিদেশ থেকে মাদক অবৈধপথে আনেন। আর মাদক কেনার টাকা অবৈধপথেই পাচার হয়ে যায়। এদের চিহ্নিত করা গেলে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।


শর্টলিংকঃ