রাবিতে চার বছর ধরে হল কমিটি নেই ছাত্রলীগের


সুব্রত গাইন, রাবি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নেই ছাত্রলীগের। ছাত্রদের ১১টি হলে সবশেষ ২০১৫ সালে একবছর মেয়াদী কমিটি দেয়া হয়। সেই হিসেবে ২০১৬ সালে শেষ হয়েছে কমিটির মেয়াদ। আর ছাত্রীদের ৬টি হলে ঠিক কত বছর ধরে কমিটি হয়নি, তা জানেই না খোদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা।

ফলে হলগুলোতে নেতৃত্বশূণ্য ছাত্রলীগে কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। ইচ্ছেমতো নেতাকর্মীরা সিটবাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়াচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগের ইমেজ সংকট ক্রমেই বাড়ছে।

অপরদিকে, ছাত্রী হলগুলোতে ছাত্রলীগের কার্যক্রম না থাকায় কৌশলে নিজেদের কর্মী বৃদ্ধি করতে অনেকটা প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা।

ক্যাম্পাস থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিতাড়িত ছাত্র শিবিরও  হলগুলোতে ছাত্রলীগের কমিটিশূণ্য থাকার সুযোগে গা ঢাকা দিয়ে নিরাপদে অবস্থান করছে। এনিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন হলে অবস্থান করা ছাত্রলীগের কর্মীরাও।

হল শাখায় গত দুই তিন বছর ধরে কাজ করছেন এমন বেশ কয়েকজন কর্মী জানান, কমিটি না থাকায় হলে কর্মী বাড়ছে না। ফলে মিছিল-সমাবেশেসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে যখন শীর্ষ নেতারা হল থেকে কমপক্ষে ৫০/৬০ জনকে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন, তখন বাধ্য হয়ে সাধারণ ছাত্রদের জোর করে নিয়ে যেতে হয়। যাতে খুব বাজে ইমেজ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: রাবি ছাত্রীদের ভরসা ক্যাম্পাসের ‘বিনোদিনী বাজার’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর সম্মেলন করে ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে রাবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

সেসময় তিন মাসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ এবং হল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে সাড়ে ছয় মাস পরে ২০১৮ সালের জুনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও হল কমিটি গঠন করা হয়নি।

সবশেষ ২০১৫ সালে মিজানুর রহমান রানা ও খালিদ হাসান বিপ্লব কমিটির সময়ে হল সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রদের ১০টি হলের কমিটি গঠন করা হয়। তবে সেই সময় ছাত্রীদের হলের কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে প্রায় ৪ বছর ধরে কমিটিশূণ্য ছাত্রদের ১১টি হল। আর ছাত্রীদের ৬টি হলের কমিটি কবে হয়েছিল, সেটা এখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে শুধুই ইতিহাস!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিবরিয়া-রুনুর কমিটি গঠনের ২০১৭ সালের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির চাপে ছাত্রদের ১১টি ও ছাত্রীদের ৬টি হলের কমিটিতে পদ পেতে আগ্রহী নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করে। জীবনবৃত্তান্ত ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করে হল শাখা কমিটির একটি খসড়া তালিকাও করেন নেতারা।

তবে খসড়া ওই তালিকা চূড়ান্ত হয়ে একবছরেও আলোর মুখ দেখেনি। এতে সক্রিয় কর্মীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা হল শাখার কার্যক্রমে গতি আনতে দ্রুত কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদার বখ্শ হলের একজন পদপ্রত্যাশী বলেন, আমি দ্বিতীয় বর্ষ থাকা অবস্থায় হল কমিটিতে পদ পেতে সিভি দিয়েছিলাম। তার আগে থেকে সক্রিয়ভাবে সংগঠনে কাজ করছি। এখন তৃতীয় বর্ষ শেষ হয়ে গেলো, কিন্তু কমিটি হলো না।

ওই নেতা বলেন, সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি হলে সেখানে পদ পেতে সিভি দিলে, তখন জানতে চাইবে আমার  হলে পোস্ট ছিল কিনা। হলে পোস্ট না থাকায় আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে তখন রাখা হবে না। আমার মতো অনেকেই মাঠে খেটে-খুটেও এভাবে দিনশেষে শূণ্য হাতে ফিরছে রাবি থেকে।

রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর অনুষদ ও বিভাগের  আংশিক কমিটি করেছি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই হল কমিটি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তবে হল কমিটির জন্য কারও কাছ থেকে সিভি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা কিবরিয়া।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী ইউনিভার্সাল২৪নিউজ-কে বলেন, ডাকসু নির্বাচন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আমরা এখন ব্যস্ত। তবে রাবিতে ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং হল কমিটি নেই, এ বিষয়টি জেনেছি আমরা। ডাকসু নির্বাচনের পর এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি।


শর্টলিংকঃ