লেখক-সাহিত্যিকদের পদচারণায় মুখর বৃষ্টিস্নাত মতিহার


হোসাইন সাজ্জাদ ও সুব্রত গাইন, রাবি:

রোববার (১০ মার্চ) গোধূলীলগ্ন থেকেই রাজশাহীর আকাশে মেঘের ঘনঘটা। সন্ধ্যার আঁধার নামতেই আকস্মিক দমকা হওয়ায় কেঁপে উঠলো প্যারিস রোডের গগনশিরীষ গাছগুলো। সঙ্গে ফাল্গুনের অপ্রত্যাশিত বিরামহীন একপশলা বৃষ্টি। লেখকের মনকে নাড়া দিতে এর চেয়ে আর কী-ই বা চাই!

বৃষ্টিস্নাত চিহ্নমেলা প্রাঙ্গণ। ছবি: সুব্রত গাইন

কবির আনমনে কবিতার ছন্দ তৈরির রসদ জোগাতেই কী হঠাৎ দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি! এমন প্রশ্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে।

কারণ রাত পোহালেই মতিহারের সবুজ চত্ত্বরে বসছে ‘চিহ্নমেলা-চিরায়তবাংলা’। মেলায় অংশ নিতে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে পা রেখেছেন এপার বাংলা-ওপার বাংলার দেড় শতাধিক লেখক-সাহিত্যিক ও সম্পাদক।

বৃষ্টিস্নাত প্যারিস রোডে সন্ধ্যায় হাঁটছিলেন একদল শিক্ষার্থী। ‘চিহ্নমেলা-চিরায়তবাংলা’ ও লেখকদের ক্যাম্পাসে আসার অনুভূতি জানতে চাইলে তাদেরই একজন আফসানা মিমি বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস এমনিতেই অনিন্দ্য সুন্দর। এ ব্যাপারে কারো দ্বিধা নেই। আয়তন, সৌন্দর্য, সবুজের আবহ সবকিছুই যে কাউকে টানে।’

বৃষ্টিস্নাত প্যারিস রোড। পুরোনো ছবি

‘ফাল্গুনের সন্ধ্যায় এমন বৃষ্টি ক্যাম্পাসকে ভিন্ন এক রূপ এনে দিয়েছে। ঠিক সেসময়ে চিহ্নমেলা উপলক্ষ্যে কবি-লেখকদের আগমন।

প্রকৃতি যেন কবি-লেখকদের কবিতা ও গল্পের ছন্দ এনে দিতে এমন আয়োজন করেছে’ বলেন তিনি।

এ তো গেল শিক্ষার্থীদের কথা। লেখক-সাহিতিক্যদের অনুভূতি কী? সত্যিই কী প্রকৃতি তাদেরকে কবিতার ছন্দ বা গল্পের রসদ জোগাতে ফাল্গুনের সন্ধ্যায় বৃষ্টি ঝরিয়েছে!

এমন ভাবনা থেকে মেলা উপলক্ষে আগত লেখকদের খোঁজে ছোটাছুটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো ফোকলোর চত্ত্বরের পাশের রাস্তায় পাওয়া গেল ঢাকা থেকে আগত কবি আছাদ মান্নানকে।

কেমন লাগছে এমন দিনে মতিহারে এসে- প্রশ্নে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি এনে বললেন, ‘ভালোই লাগছে!

আজ তো প্রকৃতি সত্যিই দিনটি আমাদের জন্যই আয়োজন করেছে!’ পাশেই পাওয়া গেল গুণী লেখক ইসলাম রফিককে। বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি তিনি।

এ অঞ্চলের সাহিত্য চর্চায় চিহ্নমেলার প্রভাব ও ভূমিকার কথা বললেন তিনি। বললেন, ‘রাজশাহী ক্রমেই শিল্প-সাহিত্যে এগিয়ে যাচ্ছে। আর রাজশাহী অঞ্চলসহ গোটা দেশে বাংলা সাহিত্যের উন্নয়নে ‘চিহ্ন’ মাইলফলক। ‘চিহ্ন’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, ‘চিত্তের প্রসারতা মস্তিষ্কের মুক্তি’ স্লোগানকে ধারণ করে শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত চিহ্নকর্মীরা। সন্ধ্যার বৃষ্টি সব আয়োজনে কিছুটা এলেমেলো অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তবে তাতে কী, সাহিত্য আর বৃষ্টি যে পরিপূরক; তা ভেবেই সবাই শিহরিত হচ্ছেন বলে জানালেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হামিদা আফরোজ লিয়া।

চিহ্নমেলা শুরু হচ্ছে সোমবার। তবে রোববার বিকেলে সেখানে দেখা গেল এমন ভিড়

মেলা বিষয়ে চিহ্ন’র সদস্য অর্বাক আদিত্য বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে তরুণরা ইন্টারনেটে প্রচুর সময় ব্যয় করছেন। ফলে ধীরে ধীরে তারা স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে এবং পাশাপাশি হয়ে পড়ছে সাহিত্যবিমুখ। এ ধরনের সাহিত্য মেলা শিক্ষার্থীদের সাহিত্যে চর্চায় উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করেন তিনি।

চিহ্নপ্রধান ড. শহীদ ইকবাল বলেন, মেলাটিতে মূলত এপার বাঙলা, ওপার বাঙলার শিল্প, সাহিত্যের লোকজন উপস্থিত থাকবেন। বয়োবৃদ্ধ লেখকদের সঙ্গে মিলিত হবে তরুণ লেখক পাঠকরা। জাতীয় সঙ্গীত, ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করবেন ভারতের প্রখ্যাত কথাশিল্পী দেবেশ রায়।

মেলা উপলক্ষে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনের রাস্তায় শোভা পাচ্ছে আল্পনা

মেলায় ভারতের আরেক প্রখ্যাত লেখক প্রভাত চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় দুইশতাধিক লেখক, পাঠক ও সম্পাদকরা মেলায় অংশ নেবেন বলে জানান তিনি।

চিহ্নপ্রধান আরও বলেন, ‘মেলায় লেখক সরকার মাসুদকে সৃজনশীল ও হোসেন উদ্দীন হোসেনকে মননশীল লেখনির জন্য চিহ্ন পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও মেলায় অংশ নেওয়া দুই বাংলার ছোট কাগজগুলোর মধ্যে আটটি কাগজকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।’


শর্টলিংকঃ