শিবসেনাকেই সমর্থন করার চিন্তাভাবনা করছে কংগ্রেস!


ভারতের মহারাষ্ট্রে প্রাদেশিক সরকার গঠন নিয়ে ক্রমশই জল ঘোলা হচ্ছে। শিবসেনাকে সমর্থন করার চিন্তাভাবনা করছে কংগ্রেস। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নিতে না পারলেও এ বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে আজ সোমবার নয়াদিল্লিতে সোনিয়া গান্ধীর বাসভবন বৈঠকে বসছে দলটির কার্যনির্বাহী কমিটি।

মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করবে না বলে গতকাল রোববার বিজেপি জানিয়ে দেয়ার পর শিবসেনাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার গঠনে এনসিপি-কংগ্রেসের সমর্থনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিবসেনা।
ধফাবৎঃরংবসবহঃ

সমর্থনের প্রশ্নে এনসিপি প্রধান কিছুটা আগ্রহ দেখালেও প্রথমেই শিবসেনাকে সমর্থনের প্রস্তাব খারিজ করে দেন কংগ্রেসের অন্তর্র্বতীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। তবে সেই অবস্থান থেকে কংগ্রেসের সরে আসার ইঙ্গিত মিলছে। সূত্র বলছে, দলীয় আদর্শবিরোধী কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনাকে সমর্থন দিচ্ছে কংগ্রেস।

সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে বৈঠক থেকে কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা মহারাষ্ট্রে শিবসেনা নেতৃত্বাধীন সরকারে সমর্থন দেবে কিনা। এদিকে শিবসেনার সঙ্গে সরকার গঠনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নেয়ার আগে শিবসেনাকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ছাড়ার শর্ত দিয়েছিল এনসিপি।

এনসিপিরি দেয়া শর্ত অনুযায়ী কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে এসেছে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনে মরিয়া উদ্ধব ঠাকরের দল শিবসেনা। দলটির সদস্য অরবিন্দ সাওয়ান্ত সোমবার সকালেই মোদির মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। কংগ্রেসের সমর্থন যে নিশ্চিত এ পদত্যাগ তারই ইঙ্গিত।

শিবসেনা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে দলের একমাত্র সদস্যকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে অনেকেই মনে করছেন এর মাধ্যমে শারদ পাওয়ারের এনসিপিকে বন্ধুতার বার্তা দিল শিবসেনা। এছাড়া সোমবার দলের বিধায়কদের নিয়েও বৈঠক করবে শিবসেনা প্রধান উদ্ভব ঠাকরে। সিদ্ধান্ত এখন এনসিপি-কংগ্রেসের হাতে।

এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার বলেছেন, ‘যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক না কেন তা কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করেই নেয়া হবে।’ এদিকে কংগ্রেস যদি শিবসেনাকে সমর্থন করে তাহলে তা হবে দলটির নীতিবিরোধী ও আদর্শের পরিপন্থী। কেননা শিবসেনা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং কংগ্রেস বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত।

দলীয় নীতি ও আদর্শের কারণেই ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির জোটের শরিক ও মন্ত্রিসভায় ছিল শিবসেনা। এদিকে বার্তা সংস্থা এএনআই বলছে, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত সরকার গঠনে সমর্থন আদায়ে আজ নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ক্ষমতার ভাগাভাগিতে ২৫ বছরের জোট সঙ্গী শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির দ্বন্দ্বের শুরু। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন পর শিবসেনা বিজেপিকে সরকার গঠনে সমর্থন দেয়ার কথা বললেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। তাদের দাবি, পাঁচ বছরের অর্ধেক সময় তাদের বাকি অর্ধেক সময় মুখ্যমন্ত্রী থাকবে বিজেপির।

তবে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদের ভাগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। রাজ্যটিতে রাষ্ট্রপতির শাসন জারিরও হুমকি দেয় তারা। অবশেষে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে একমত না হওয়ায় নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর ক্ষমতাসীন বিজেপি জানিয়ে দেয় মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করবে না তারা।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিজেপি সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে শিবসেনাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান রাজ্যপাল। কিন্তু সরকার গঠন করতে হলে তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ও কংগ্রেসের সমর্থন প্রয়োজন শিবসেনার।

সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তাই সম্ভাব্য সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজেপি ১০৫, শিবসেনা ৫৬, এনসিপি ৫৪ ও কংগ্রেস ৪৪টি আসনে জয়লাভ করে। ২৮৮ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় সরকার গঠনে প্রয়োজন ১৪৫ আসন।


শর্টলিংকঃ