স্বতন্ত্র এমপিদের ‘সংঘাত’ নিয়ে কড়া সতর্কবার্তা প্রধানমন্ত্রীর


ইউএনভি ডেস্ক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের হারিয়ে জিতে আসা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ‘আত্মঘাতী সংঘাতের’ ব্যাপারে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যাদের নমিনেশন দিয়েছি, তাদের অনেককেই আপনারা হারিয়ে নিজেরা জিতে এসেছেন।

আপনাদের অভিনন্দন জানাই। সঙ্গে আরেকটা কথা বলবো, আমার কাছে প্রতিনিয়ত খবর আসছে…। আপনারা জিতেছেন ঠিক আছে, কিন্তু এ দেশের মানুষ তো আপনাদেরই মানুষ। যারা নৌকা মার্কায় কাজ করেছে, তারা তো আমাদের দলের প্রতি অত্যন্ত অনুগত, বিশ্বস্ত। তাদের ওপর কোনও ধরনের আক্রমণ বা সন্ত্রাস অথবা কোনও কিছু যেন না হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে আমি সতর্ক করে দিচ্ছি। এখানে যেই হোক, যে দলের হোক, আমি কিন্তু কাউকে ছাড়বো না।

রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্রতিদিন যা ছবি পাই, যা পাই, সরাসরি পুলিশকে দিচ্ছি, গোয়েন্দা সংস্থাকে দিচ্ছি। যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, সেখানে কিন্তু ফলাফল কারও জন্য ভালো হবে না। এটা আমি আপনাদের সতর্ক করতে চাই। এই সংঘাতটা আমাদের জন্য আত্মঘাতী হবে। এমনিতে একটা জ্বালাও-পোড়াও গোষ্ঠী আছে। কাজেই আপনাদের ভেতরে যদি দ্বন্দ্ব থাকে মিটিয়ে ফেলতে হবে। সবার সঙ্গে মিশে কাজ করতে হবে।

১৯৭৫ সালের পর রাজনীতি উল্টো পথে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা পার্লামেন্টের মেম্বার হয়েছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসটা জানতে হবে। যারা প্রথমবার মেম্বার হয়েছেন, তাদের আমাদের সংবিধানটা পড়তে হবে। আর এই সংবিধান পড়ার মধ্য দিয়ে আপনারা জানতে পারবেন, মাত্র ৯ মাসে এই সংবিধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের উপহার দিয়েছেন। সেটা একটা বিরল ঘটনা।

সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি পড়ার অনুরোধ জানিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, পার্লামেন্ট সম্পর্কে জানতে হলে প্রসিডিংস পড়ে পার্লামেন্ট প্র্যাকটিস কীভাবে করতে হয়, সেটাও আপনারা জানবেন। এ ছাড়া পার্লামেন্ট প্র্যাকটিসের ওপর কতগুলো বই আছে, সেগুলো পড়লে জানতে পারবেন। পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে আপনাদের অনেক দায়িত্ব আছে।

ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়, দেশ-জাতি-মানুষের প্রতি দায়িত্ব—নিজের এই ধারণা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই চিন্তা-ভাবনা থেকেই আমি রাষ্ট্র পরিচালনা করি। বাবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বলেছিলেন, ‘আমি জনগণের সেবক।’ আমি তারই কথা অনুসরণ করে ঘোষণা দিয়েছি, আমি জনগণের সেবক। যদি দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, সেখানেই সার্থকতা। কাজেই এক একটা কাজ যখন আমরা করি, তখন শুধু মনে হয়—বাবা যদি বেঁচে থাকতেন আজকের বাংলাদেশটা দেখে যেতে পারতেন।

প্রতিটি এলাকায় উন্নয়নের পরিবর্তনটা দেখার কথা বলে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, আমি অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। দেশের একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। করোনার সময় মানুষকে বাঁচাতে সব কিছু বন্ধ করে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করেছি। আপনাদের সবার সহযোগিতাও আমরা পেয়েছি। আপনাদের নির্বাচনি এলাকায় কেউ ভূমিহীন, গৃহহীন থাকলে তাদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।

বৈশ্বিক কারণে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া, সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সমস্যাটা এখন আমাদের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে তীব্র। আমার ধারণা ছিল, এই ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব দেখা দেবে, খাদ্যমন্দা দেখা দেবে, জিনিসের দাম বাড়বে। কিন্তু আমি যদি আমার নিজের দেশে উৎপাদন বাড়াতে পারি, নিজের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে যেকোনও অবস্থা মোকাবিলা করতে পারবো। সেই ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি।

২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার যদি ক্ষমতায় না আসতো, তাহলে উন্নয়নের ধারাগুলো, সূচকগুলো একে একে সব হারিয়ে যেতো। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যতটুকু অর্জন আমরা করেছিলাম, আট বছর পরে ক্ষমতায় এসে দেখি তা থেকে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছি। সেই ক্ষেত্রে আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচনটা হোক আর আমার একটা আস্থা-বিশ্বাস ছিল যে জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে আবার সরকার গঠন করতে সহায়তা করবে।

এবারের নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, যথাযথভাবে সেই চেষ্টা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারণ এখানে আন্তর্জাতিক কিছু শ্যেনদৃষ্টির মধ্যে আমরা পড়ে গিয়েছিলাম। যে রাজনৈতিক দল জ্বালাও-পোড়াও করে, মানুষ হত্যা করে—তাদের চেষ্টাই ছিল নির্বাচনটা যেন না হয়। তারা মদত পাচ্ছিল আন্তর্জাতিক কিছু বড় দেশ থেকে। তাদের ওই প্রচেষ্টা যাতে সফল হতে না পারে এবং জনগণের ভোটে নির্বাচন যেন আরও সুষ্ঠুভাবে হয়, মানুষ যেন ভোট দিতে আসে, ভোটকেন্দ্রে আসে এবং ভোট নিয়ে যেন প্রশ্ন করতে না পারে…। আমাদের একটা ধারণা ছিল ভোট যদি হয়েও যায়, একটা ক্র্যাডিবল ইলেকশন হবে না—তখন এটা নিয়ে তারা কথা উঠাবে, স্যাংশন দেবে, অমুক দেবে, সমুক দেবে। অনেক কথাই তাদের ছিল, সেগুলো মোকাবিলা করা, তাদের দুরভিসন্ধি মোকাবিলার জন্য আমি নির্বাচনটা উন্মুক্ত করি।


শর্টলিংকঃ