স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা রুনু


সুব্রত গাইন ও হোসাইন সাজ্জাদ:

ফয়সাল আহমেদ রুনু। শিক্ষা নগরীর রাজশাহীর নওহাঁটার সন্তান। বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গফুর সরকার ছিলেন তিন বারের ইউপি চেয়ারম্যান এবং ২০০৮ সালে নওহাঁটা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ফলে পারিবারিকভাবে রাজনৈতিক পরিবেশ ও দর্শনে বেড়ে ওঠা রুনুর।

ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন ফয়সাল আহমেদ রুনু

২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। তখন থেকে জড়িয়ে পড়েন ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতিতে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে মতিহারের সবুজ চত্বরে তার পথচলা শুরু হয়।

২০১২ সালের ১৬ জুন প্রায় ৭ বছর পর রাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। আহমদ-বিপুর ওই কমিটিতে সদস্য পদ পেয়ে ছাত্রলীগের নেতা হন রুনু। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সাধারণ সম্পাদক, রানা-তুহিন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

সবশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাউন্সিলের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। তার কমিটিতে সভাপতি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া

‘গ্রুপিংমুক্ত’ রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু

কিবরিয়া-রুনু কমিটি গঠনের পর থেকে কখনই গ্রুপিং দ্বন্দ্বে জড়ায়নি রাবি ছাত্রলীগ। যা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইতিহাসেও অনন্য। গ্রুপিংমুক্ত রাবি ছাত্রলীগ নিয়ে তাই স্বস্তি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের।

ফয়সাল আহমেদ রুনু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও সর্বদা খোঁজ রাখেন নিজ এলাকার মানুষের। নওহাঁটার বেশিরভাগ মানুষই তাকে দেখে সন্তানের চোখে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে ছাত্র রাজনীতি শেষে নিজ এলাকায় বৃহৎ পরিসরে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চান রুনু।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশেষ মূহুর্তে ছাত্রলীগ নেতা রুনু

রোববার (২২ এপ্রিল) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে বসে ইউনিভার্সাল২৪নিউজ.কম এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন ভাবনার কথা জানান রাবি ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা রুনু।

আরও পড়ুন: রাবির বৃত্তিখাতে ৫০ লাখ টাকা দিলেন সাবেক ছাত্র

রাকসু নির্বাচন নিয়ে জানালেন তার মতামত। রুনু বলেন, রাকসু সবাই চাইছে। ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমারও এটা চাই। অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যারা রাকসু সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। ধারণা কম। কারণ দীর্ঘদিন রাকসু নির্বাচন হয়নি। ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, এখন রাকসুতেও নির্বাচন করার পরিবেশ আছে বলে মনে করি আমি এবং আমার সংগঠন রাবি ছাত্রলীগ।

ছাত্রী হলের সমস্যা নিরসনে উপাচার্যকে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে স্মারকলিপি দেন রুনু

ছাত্রলীগ নেতা রুনু বলেন, রাকসু সচল না থাকায় আমরা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করেছি। কর্মসূচি দিয়েছি, প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। কিছু মানা হয়েছে, আবার কিছু হয়নি। তবে ছাত্র-ছাত্রীরা ভোট দিয়ে রাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচন করলে, তারা আরও জোরালোভাবে দাবি আদায়ে কাজ করতে পারবে বলেও স্বীকার করেন রুনু।

রাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর এমন শঙ্কার বিষয়ে রুনু বলেন, কেউ ক্যাম্পাসে এসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে না জড়ালে ছাত্রলীগের কোনো আপত্তি নেই। শুধুমাত্র স্বাধীনতাবিরোধী শিবিরের ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট আপত্তি আছে। বাকিরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করুক ছাত্রলীগও সেটা চায়। সুষ্ঠুভাবে রাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের সব ধরনের সহযোগিতা পাবে প্রশাসন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতা রুনু

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে তাদের (কিবরিয়া-রুনু) কমিটি কী কী করেছে, এমন প্রশ্নে রুনু বলেন, আমরা কমিটি গঠনের পর থেকে নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছি। হলে সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজিরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আবাসিক হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনে খাবারের মান নিয়ে একাধিকবার ভোজনালয় শ্রমিক ইউনিয়ন ও হল প্রাধ্যক্ষসহ প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বসে কথা বলেছি। খাবারের মান ভালো করার জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমেছি। আমরা নিজেরাও কর্মসূচি করছি, উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা যে কর্মসূচি করছে, সেখানেও আমরা একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নিয়েছি। আগামীতেও নিবো। এছাড়া ক্যাম্পাস পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ছিনতাই, মাদকের বিরুদ্ধেও কাজ করছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেতৃত্ব দেন রুনু

রাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে আছে কিনা এমন প্রশ্নে রুনু বলেন, এটা ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিভাবকতুল্য নেতারা। যাদের নেতৃত্বে রাকসু ভোট করলে ছাত্রলীগ প্যানেলসহ জয়ী হতে পারে, তাদেরকে মনোনীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

সাম্প্রতিক সময়ে জুনিয়র কিছু নেতাকর্মী বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি গোচর করা হলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগ বৃহৎ একটি সংগঠন। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, হল কমিটি, অনুষদ ও বিভাগ কমিটি দিয়ে ৬ শতাধিক নেতা রয়েছেন। এছাড়াও কর্মী রয়েছেন অসংখ্য।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে বিশেষ মূহুর্তে রুনু

‘এরমধ্যে দু’একজন মাঝে-মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি করে। এটা সংগঠনের নয়, তাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। তবুও তারা যেহেতু ছাত্রলীগ করেন, তাই সংগঠন দায় কাঁধে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আগামীতেও অপকর্ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ বলে উল্লেখ করেন রুনু।

২০১৫ সালে দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর ওই বছরের ৩ মার্চ রুনুর বাবা তৎকালীন নওহাঁটা পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল সফুর সরকারের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাবার রাজনীতি দেখে বড় হওয়া রুনু ভেঙে না পড়ে সামনে এগিয়ে যেতে চান।

রুনুর প্রয়াত বাবা আব্দুল গফুর সরকার (বাম থেকে প্রথম) ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন

রুনু বলেন, ‘আমার বাবা নওহাটা যখন ইউনিয়ন পরিষদ ছিল, তখন তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে পৌরসভা হওয়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার আত্মার বন্ধন ছিল। মানুষ খুব ভালোবাসতেন বাবাকে। বাবাও দিনরাত নিজ এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতেন। তাকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই।’

আগামী দিনে বৃহৎ পরিসরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক প্লাটফরম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়ে নিজ এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তার বাবার স্বপ্ন ও রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ বাস্তবায়নে কাজ করতে করতে চান ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ রুনু।


শর্টলিংকঃ