৩২ বছর ঝুলে থাকা সীমা হত্যার বিচার ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ


ইউএনভি ডেস্ক: 

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সাক্ষ্য দেয়ার অনীহার কারণে ৩২ বছর ধরে ঝুলে থাকা সীমা হত্যার বিচার আগামী ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আইনজীবী ইসরাত হাসান বিষয়টি নজরে আনলে এম এনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন।

আইনজীবী ইসরাত হাসান আজ চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানান। আদালত ৩ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে হাইকোর্টে। মামলা নিষ্পত্তি করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ৩২ বছরে একটি মামলা শেষ হবে না, এর দায় দায়িত্ব কি কারো থাকে না? আদালত বলেন, ৫০৯ ধারায় প্রবিশন আছে সাক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।

সীমা হত্যা মামলাটি বর্তমানে ঢাকার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক চমন বেগম চৌধুরীর আদালতে বিচারাধীন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. মো. আনোয়ার হোসেনের সাক্ষ্য না দেয়ার কারণে মামলাটি ৩২ বছর ধরে ঝুলে আছে।

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার জগন্নাথ সাহা রোডে ১৯৮৮ সালের ২৬ এপ্রিল খুন হন সীমা মোহাম্মদী (২০)। বাড়িতে ঢুকে ছুরিকাঘাত করে সীমাকে হত্যা করে মোহাম্মদ আহমদ ওরফে আমিন নামে এক যুবক। ঘটনার পরপরই ওই যুবকের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন সীমার মা ইজহার মোহাম্মদী। দুই মাস পর ২৫ জুন পলাতক আমিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে সীমাকে বিয়ে করতে না পেরে সে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আদালত থেকে আসামিকে হাজিরের জন্য ১৯৯৯ সালের ২২ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।

২০০১ সালের ২৯ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের পরও সাক্ষ্য দিতে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের অনীহার কারণে মামলার বিচারকাজ বারবার পিছিয়ে যায়। অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের তৎকালীন প্রভাষক আনোয়ার হোসেন সাক্ষ্য দিতে অদ্যাবধি আদালতে হাজির হননি।

ওই চিকিৎসককে এ পর্যন্ত অর্ধশত অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য এ পর্যন্ত মামলার তারিখ পড়েছে ১১২ বার। ১১ জন বিচারক বদল হয়েছেন। সরকার পাল্টেছে ১০ বার। মামলার একমাত্র আসামি আমিন এখনও পলাতক।

এদিকে মামলার বাদী সীমার মা বিচারের অপেক্ষায় থেকে শেষ পর্যন্ত মারা গেছেন। বাবারও মৃত্যু হয়েছে।

সীমার পরিবারের সদস্য ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আসামি ধরতে পুলিশ প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। একই সঙ্গে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সাক্ষ্য দেয়ার অনীহায় বিচারকাজ আরও বিলম্বিত হচ্ছে। একের পর এক সমন জারির পরও বিচারিক আদালতে তাকে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। সাক্ষীকে হাজির করতে বিচারক বেশ কয়েকটি আদেশও দিয়েছেন।

গত সোমবার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. মো. আনোয়ার হোসেনের সাক্ষ্য দেয়ার তারিখ ছিল। কিন্তু এদিনও হাজির না হওয়ায় আদালত ফের সমন জারি করেছেন।

একটি সূত্র জানায়, অনেক আগেই ডা. মো. আনোয়ার হোসেন অবসরে গেছেন। তবে বর্তমানে একটি বেসরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি চাকরি করছেন। ওই ঠিকানায় আদালতের সমন পৌঁছে কি না, তা-ও কেউ বলতে পারছেন না।
মামলার চার্জশিট থেকে জানা যায়, আসামি আমিন একজন আটকে পড়া পাকিস্তানি। তার বাবার নাম মো. জামিল। বাংলাদেশে তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। ঘটনার ২ মাস আগে তিনি তেজগাঁওয়ের উর্দু রোডের আল আমিন বোর্ডিংয়ের ৫৫ নম্বর রুমে দৈনিক ২৮ টাকা ভাড়ায় থাকতেন। সীমাকে খুন করার পর ওই বোর্ডিংয়ে আর যাননি আমিন। এরপর থেকে আর তার কোনো হদিস পায়নি পুলিশ। জানা গেছে, পলাতক আমিন গত বছর উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করে। পরে আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।


শর্টলিংকঃ