প্রেমিকাকে বিয়ে করায় এমপির ইন্ধনে অপহরণ মামলা


নিজস্ব প্রতিবেদক : 
রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রওজাতুল আফরোজকে (২১) অপহরণের মামলায় মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক (২৭) ও তার বাবা ছলিম সরদারকে (৫১) গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা অবশ্য অভিযোগে বলেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে দলীয় টানাপোড়েনের জেরেই ছাত্রলীগ নেতা রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। যদিও রাজ্জাক ও আফরোজ পরস্পরকে ভালোবেসে কিছুদিন আগে বিয়ে করেছেন।


সংশ্লিষ্টদের আরও অভিযোগ, প্রায় এক বছর ধরে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাজ্জাকের সঙ্গে এমপি আয়েনের দলীয় টোনাপড়েন চলছে। এমপি তাকে বাগে আনার চেষ্টা করছিল। এখন সুযোগ পেয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশ্য এমপি আয়েন উদ্দিন এই বিষয়ে কোন প্রভাব খাটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মোহনপুর থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ জানান, গত ৬ আগষ্ট সকাল ৭টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, তার বাবা ছলিম সরদারসহ তিনজন মিলে উপজেলার গোজা গ্রামের বাড়ি থেকে রাজশাহী কলেজ ছাত্রী আফরোজকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেন। গত ৭ আগষ্ট রাতে কলেজ ছাত্রীর ভাই দেলোয়ার হোসেন সম্রাট বাদী হয়ে মোহনপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় শুক্রবার সকালে রাজ্জাকের বাবা ছলিম সরদারকে মোহনপুরের ফুলশো গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে রাজ্জাক গ্রেপ্তার ও অপহৃত কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাজ্জাক ও তার বাবাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে কলেজ ছাত্রীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য।

 

রাজ্জাক ও আফরোজার বিয়ের কাবিননামা

এদিকে ছাত্রলীগ নেতা রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলাকে পরিকল্পিত দাবি করেছেন রাজ্জাকের আত্মীয়-স্বজনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একাংশ। রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমানসহ নেতাকর্মীরা জানান, গত ৪ মে ছাত্রলীগ নেতা রাজ্জাক ও কলেজ ছাত্রী রওজাতুল আফরোজ মোহনপুরের বাকশিমুইল ইউনিয়ন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন। পারিবারিক চাপের কারণে তারা বিয়ের খবরটি গোপন রাখেন।

এরই মধ্যে আফরোজের পরিবার থেকে বিষয়টি জানতে পেরে রাজ্জাকের বিরুদ্ধে মামলা করার তৎপরতা চলছিল। গত ৬ আগষ্ট থানা পুলিশকে প্রভাবিত করে রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করা হয়।

অন্যদিকে গ্রেপ্তারের ১২ ঘন্টা আগে ৭ আগষ্ট সকাল ৯টা ২৯ মিনিটে ছাত্রলীগ নেতা রাজ্জাক ও কলেজ ছাত্রী আফরোজ তাদের ঘনিষ্ঠ ছবি নিজ নিজ আইডিতে পোষ্ট করে জানিয়ে দেন তারা বিয়ে করেছেন এবং ভালো আছেন। রাজ্জাক ও আফরোজের বিয়ের একটি কাবিনামাও ইউনিভার্সাল২৪নিউজের হাতে এসেছে। কাজী অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী তারা গত ৪ মে সর্বসম্মতিতে এবং নিজেদের সিদ্ধান্তে  বিয়ে করেছেন।

বিয়ে নিবন্ধনকারী কাজী মোকাদ্দিস হোসেন জানান, রাজ্জাক ও আফরোজ তার দপ্তরে এসে বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করায় এবং ব্যক্তিগত নথিপত্র অনুযায়ী পাত্র-পাত্রী পুর্ণ বয়স্ক হওয়ায় তিনি উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে ইসলামি শরীয়ত মতে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে পড়ান ও বিবাহ আইনে বিয়ে নিবন্ধন করেন।

তবে দলীয় টানাপোড়েনের কারণে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়েরে প্রভাব খাটানো ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা। মামলা দায়েরের পর রাজ্জাক আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু অপহরণ মামলার আসামি হওয়ায় আমি তার ফোন ধরি নি। যা হয়েছে তা আইনী প্রক্রিয়াতেই হয়েছে।

এদিকে মামলার বিষেয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন,  প্রাপ্ত বয়স্ক দুজনেই স্বেচ্ছায় বিয়ে করলে আইনী কোনো সমস্যা নেই। আদালতে প্রমাণ হাজির করলেই মামলা খারিজ হয়ে যাবে।


শর্টলিংকঃ