অবৈধভাবে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না: বিজিবি ডিজি


ইউএনভি ডেস্ক:

অবৈধভাবে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম । তিনি জানান, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবৈধভাবে পারাপারের সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যাদের আটক করেছে, তারা সবাই বাংলাদেশী। তবে ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংসদে ওঠার পর গত নভেম্বরে ৩১২ জন ও ডিসেম্বরে ১৩৩ জন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সময় আটক হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, এনআরসি ও সিএএ নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। তবে অবৈধভাবে কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। আর ৫ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকের বিস্তারিত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

বিজিবি মহাপরিচালকের দাবি, ২০১৯ সালে আটক হওয়া ৯৯৯ জনই বাংলাদেশের নাগরিক। এর মধ্যে পুরুষ ৬০৬ জন, নারী ২৫৮ জন এবং শিশু ১৩৫ জন। এ নিয়ে ২৫৩টি মামলা করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে জড়িত তিনজন পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর বিজিবি আটককৃতদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

অনুপ্রবেশ নিয়ে কোনো প্রস্তুতি আছে কিনা জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি অবৈধভাবে কাউকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেবে না, ঢুকতেও দেবে না।

ভারতে নাগরিক আইন সংকট নিয়ে বিজিবি উদ্বিগ্ন নয় জানিয়ে সাফিনুল ইসলাম বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত যাতে অতিক্রম করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এটি আমাদের রুটিন দায়িত্ব। এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) বা সিএএ (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

ভারতে নাগরিক আইন সংকটের পর অনুপ্রবেশের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৪৪৫ জন অনুপ্রবেশ করেছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ, মহেশপুর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে এসেছে তারা। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, কাজের সন্ধানে তারা সেই দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। অনেকে বেঙ্গালুরুতে কাজ করতেন। নাগরিক আইন সংকটের পর তারা দেশে ফিরেছেন।

চলতি বছর সীমান্তে কয়েক বছরের তুলনায় বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিএসএফের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রাণঘাতী অস্ত্র সীমান্তে ব্যবহার হবে না। কিন্তু এখন কি সে রকম অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে সাফিনুল ইসলাম বলেন, ভারতের কাছে তারা এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। আমাদের হিসাবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৩৫ জন মারা গেছেন। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে।

বিজিবি প্রধান বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ৬৭০ কিলোমিটার বর্ডারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সহসাই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে। তাছাড়া সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ইউক্রেন থেকে অত্যাধুনিক ১৪টি অস্ত্র কেনার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কোনো ধরনের উত্তেজনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কোনো টেনশন নেই।

প্রসঙ্গত, গত ২৫-৩০ ডিসেম্বর দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।


শর্টলিংকঃ