কাঠবিড়ালির অভয়ারণ্য রাবি ক্যাম্পাস


হোসাইন সাজ্জাদ, রাবি:

শুক্রবার বিকেলে চারুকলা প্রাঙ্গণে এক শিক্ষার্থী বাদাম নিয়ে একটি গাছের নিচে রাখলেন। এগিয়ে গিয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে বললেন- একটু অপেক্ষা করেন বুঝবেন! মিনিট দু’য়েক এর ব্যবধানে দেখা গেল দু’টি কাঠবিড়ালি নেমে এলো ওই গাছ বেঁয়ে। নিচে রাখা বাদামগুলোর মুখে নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে খেতে শুরু করলো। সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রায়ই দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। যা দেখে মুগ্ধ হবেন যে-কেউ-ই। ৭৫৩ একরের সুবিস্তৃত ক্যাম্পাস পুরোটাই সবুজে আচ্ছাদিত। ফলে এখানে পাখির কলতানে মুখরিত হয়। তবে আলাদা করে বলতে গেলে বলাই যায়- কাঠবিড়ালির অভয়ারণ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ক্যাম্পাসে ঘুরতে বের হলে দেখা মিলবে- হঠাৎই গাছ বেয়ে নেমে আসছে কাঠবিড়ালি। নিচে পড়ে থাকা খাবার মুখে নিয়েই আবার তর তর করে গাছ বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে তারা। কখনও আবার কারও ফেলে রাখা বাদাম কিংবা অন্য খাবার আপন মনে খাচ্ছে। একগাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে হামেশায়।

ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনের গাছগুলোতে, প্যারিস রোড সংলগ্ন আমবাগান, পুরাতন ফোকলোর চত্বর, চারুকলা প্রাঙ্গণ, বিজ্ঞান ভবনগুলোর আশেপাশে, বদ্ধভূমি, শহীদ মিনার এলাকাসহ ক্যাম্পাসের সর্বত্র গাছগুলোতে এদের বাস।

প্রাণিটি চলার দৌড়াদৌড়ির ফাঁকে মাঝেমধ্যে থেমে যাচ্ছে। মাথা উঁচু করে এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখছে, যেন পুরো পৃথিবীকে দেখে নেওয়ার নেশা তার চোখে-মুখে।

কাঠবিড়ালির কান চুলকানোর দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য আঁকাবাঁকা পথে চলে। এরা তীক্ষ্ন দৃষ্টি সম্পন্নপ্রাণী। ছোট্ট প্রাণি কাঠবিড়ালির এমন খুঁনসুটির দেখতে চলে আসুন প্রাণের ক্যাম্পাস মতিহারে।

ভেটেনারি অ্যান্ড এনিমেল সাইন্স বিভাগের হাবিবুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির কাঠবিড়ালি থাকলেও আমাদের ক্যাম্পাসে কয়েক প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। শহর থেকে নগরায়নের ফলে বাসস্থানের সাথে সাথে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। আমাদের মত তাদেরও জীবন রয়েছে। আমাদের উচিত তাদের খাবার দিয়ে তাদের খাদ্য অভাব পূরণ করা।

কাঠবিড়ালি সাধারণত রোডেনশিয়া বর্গের স্কিউরিডে গোত্রের অনেকগুলো ছোট বা মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। মূলত এই বর্গের স্কিয়ারাস এবং টামাস্কিয়ারাস প্রজাতিকে কাঠবিড়ালি বলা হয়। এই প্রজাতি দুটো এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বাসিন্দা এবং এরা ঝাঁপালো বিশিষ্ট গাছে থাকা কাঠবিড়ালী।

উড়–ক্কু কাঠবিড়ালি, এবং চিপমঙ্ক, প্রেইরি কুকুর, উডচাক প্রভৃতি মোঠো প্রজাতি স্কিউরিডে গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। অস্ট্রেলিয়া ও এন্টার্কটিকা ছাড়াও পৃথিবীর সবখানেই কাঠবিড়ালি পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলের কাঠবিড়ালির শরীরে সাদা-কালো ডোরা থাকে। কাঠবিড়ালির সামনে দুই পা থেকে পেছনের পা দুটো বড় হয়ে থাকে। ফলে এরা খুব সহজেই লাফ দিতে পারে। উড়–ক্কু কাঠবিড়ালির সামনের পা থেকে পেছনের পা বড় থাকে। লেজসহ পুরো শরীর লোমে ঢাকা।

গ্রামঞ্চল থেকে নগরায়নের ফলে অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায় হতে শুরু করেছে। ডোরাকাটা মায়াবী এই প্রাণীটির দেখা মেলে কদাচিৎ। গাছ কেটে আমরা দালান-কোটা নির্মাণ করছি। এতে করে তাদের বাসস্থান কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কাঠবিড়ালি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এখনই আমাদের উচিত তাদের রক্ষা।


শর্টলিংকঃ