প্রগতির বাতিঘর বিচারপতি ছানা


বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে আন্দোলনের মাঠ ও ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় অতীত থেকে জন্ম নেয়া বিচারপতি বজলার রহমান ছানা দেশ জুড়ে আলো ছড়িয়েছেন। আগামী পহেলা জানুয়ারি’২০ রোজ বুধবার এই কৃতিমান সন্তানের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিচারপতি বজলার রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওইদিন বেলা ১১টায় চাঁপাইনববাবগঞ্জ খালঘাট গোরস্থানে দোয়া মাহফিল ও বিকেল ৪টায় রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিচারপতি বজলার রহমান ছানা ছাত্ররাজনীতিতে আপসহীন নেতৃত্ব, বিচারক হিসেবে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠা এবং সাংবাদিক হিসেবে তাঁর লেখনী প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, পরবর্তীতে বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি, রাজশাহী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজকে ছাত্ররাজনীতিতে মেধাবীদের দেখা মেলাটা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই জায়গায় মেধাবী ছাত্রনেতা বজলার রহমান ছানাকে রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় রেজাল্টের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ণের শিকার হতে হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির পথটি মসৃণ ছিল না। বৈরী পরিবেশের বিপরীতে লড়াই করে প্রতিনিয়ত পথ চলতে হয়েছে তাঁকে। ৮০’ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি বজলার রহমান ছানা রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অল্প ভোটের (১০০ ভোটেরও কম) ব্যবধানে পরাজিত হন ফজলে হোসেন বাদশার কাছে। ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ সদর আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জিএস পদে ছানা-রানা প্যানেলে থাকা জাহাঙ্গীর কবির রানা প্রায় দেড় হাজার ভোট বেশি পেয়ে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত হন। নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী রাজশাহীর সন্তান হিসেবে ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহীর ভোটারদের ভেতরে দল মত নির্বিশেষে সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোট পান। জিএস পদে পাবনার সন্তান জাহাঙ্গীর কবির রানা দল মত নির্বিশেষে পাবনার ভোট ঘরে তোলেন। বজলার রহমান ছানা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সন্তান হিসেবে সেই অঞ্চলের ভোটারদের একচেটিয়ে ভোট পান নি। তবে আঞ্চলিকতার ঊর্ধে উঠে শিক্ষার্থী মহলে ছিলেন জনপ্রিয় আস্থাবান মানুষ। তাই শেষ পর্যন্ত মুন্নুজান হলের ভোটের উপর ভর করে ভিপি পদে প্রথম ধাক্কায় বিজয়ী হতে হয় ফজলে হোসেন বাদশাকে।

ছানা যখন যে জায়গায় অবস্থান করেছেন, সেখানকার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বিশেষ করে প্রতিপক্ষরা তাঁর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা পোষণ করেন। তাই তো সামাজিক অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা না গেলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজলার রহমান ছানাকে শেষ বিদায় জানাতে ঠিকই ছুটে গিয়েছিলেন রাকসু নির্বাচনের প্রতিপক্ষ ফজলে হোসেন বাদশা। আরো দেখেছি তাঁর স্নেহধন্য শিষ্যরা নীরবে নিভৃতে কিভাবে তাঁকে স্মরণ করেন। ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারি রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য বিচারপতি বজলার রহমান ছানার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বিচারপতি বজলার রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদ গঠনের। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৩ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদ গঠিত হয়।

বর্তমানে আমি যে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, সে ঐতিহাসিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান বিচারপতি বজলার রহমান ছানা। যা সাংবাদিকতার স্বর্ণালী অধ্যায়ের স্বাক্ষ্য বহন করে। স্বাক্ষ্য বহন করে, ছাত্রনেতার যোগ্যতার। ছাত্রাবস্থায় বজলার রহমান ছানা ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের তীর্থস্থান খ্যাত রাজশাহী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়ে তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন।

ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি; সততা, যোগ্যতা ও মেধার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাকসুতে পরাজয় বরণ করলেও, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন। রাজনৈতিক দর্শন, সততা, নিষ্ঠা কোন ব্যক্তির ভেতরে থাকলে তাঁর দ্বারা দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত ডা. আ.আ.ম. মেসবাহুল হক বাচ্চু ও ডা. মঈনউদ্দীন আহমেদ মন্টুর পরে দেশজুড়ে আলোচিত ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে যে নামটি যুক্ত হয়েছে, সে নামটি হলো বিচারপতি বজলার রহমান ছানা। তাঁদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হচ্ছে না। গুণী মানুষের কদর দেয়া না হলে, বরেন্দ্র ও গৌড় অঞ্চলের তপ্ত উর্বর মাটিতে প্রতিনিয়ত নতজানু ও সুবিধাবাদি নেতার জন্ম হবে।

ছাত্র রাজনীতিতে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তৈরির পথ ক্রমেই রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। সে উপলব্ধি থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল এবং রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তানবিরুল আলমের সাথে আলোচনাক্রমে বিচারপতি বজলার রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদ গঠন করা হয়। স্মৃতি পরিষদ গঠনের খবর পেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদি হাসান তালুকদার।

পহেলা জানুয়ারি বিচারপতি বজলার রহমান ছানার এক সময়ের কর্মস্থল রাজশাহী প্রেসক্লাবে যেমন স্মরণ সভা হচ্ছে। স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে আলোচনা সভা হচ্ছে। সেসময় কবর জিয়ারত করতে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খালঘাট গোরস্থানে ছুটে গিয়েছেন তাঁর স্নেহমুগ্ধ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদি হাসান তালুকদার। বলছিলেন, কিভাবে তিনি ছোটদের স্নেহ করতেন খোঁজখবর নিতেন। নিরঅহংকারী মানুষটি অগ্রজদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে এতটুকু কার্পণ্য করতেন না।

বিচারপতির দায়িত্ব পালনকালে ঢাকায় সার্কিট হাউজ মসজিদে প্রাক্তন রাবি শিক্ষার্থী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী বিশিষ্ট কবি মোস্তাক দাউদীর নামাজে জানাজা শেষে রাজশাহী প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য আহমদ সফিউদ্দিনকে দেখতে পেয়ে প্রটোকল ভেঙ্গে দেখা করতে ছুটে আসেন। আবার বিচারকের চেয়ারে বসে যাঁদের সাথে একসময় রাজনীতি করেছেন তাঁদের খোঁজখবর নিতে ভুল করতেন না। তাইতো শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আতাউর রহমানকে ফোন করে বলেন- বেয়াই চলে আসেন, নোংরা রাজনীতিতে না জড়িয়ে আমার চেম্বারে বসেন, আইন পেশায় মনযোগ দেন। এমনটাই ছিলো বজলার রহমান ছানার চরিত্র।

জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থানের প্রতি প্রবল ঝোঁক থাকায় ঢাকায় অবস্থান করতেন। কিন্তু ভুলে যাননি জন্মভূমিকে। ৯৮’সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বন্যার পানি ঢুকে জলাবদ্ধতায় লাশ দাফনের জায়গা পাওয়া যাচ্ছিলো না। সে সময় সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মিলে তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের কাছে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য অর্থ বরাদ্দের আর্জি নিয়ে গেলে তিনি জেলা শহরে বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ দিতে রাজি ছিলেন না। এ সময় ডেপুটি এনর্টি জেনারেল পদে থাকা বজলার রহমান ছানা পানি সম্পদ মন্ত্রীর (একসাথে বাকশালের রাজনীতিতে জড়িত থাকার সুবাদে) কাছ থেকে এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করিয়ে নেন। যার সুফল পাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ।

দায়িত্বের প্রশ্নে শতভাগ নিজেকে উজাড় করে দিতেন, নীতির প্রশ্নে ছিলেন তেমনভাবে আপোষহীন। শেষ বয়সে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন তিনি। বিধি অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের চিকিৎসার ব্যয় সরকার বহন করে। কিন্তু সে কাগজকলমের প্রসেসিংয়ে বিলম্ব হয়। তাই একাধিকবার চিকিৎসার দরকার পড়ায়, চাইলে প্রথমেই পরবর্তি খরচের হিসাবটা যুক্ত করে বিলটা তুলতে পারতেন। এই নূন্যতম ব্যতয়ে রাজি হন নি বিচারপতি বজলার রহমান ছানা। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ব্যয় জোগাড় করতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হয়েছে ঠিকই। এরপরও নীতি বিরোধী সামান্য সুবিধা গ্রহণ করেন নি।
সার্টিফিকেটে বজলুর রহমান ছানা নাম থাকলেও রাজনৈতিক ও বন্ধুমহলে ‘বজলার রহমান ছানা’ নামেই পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের অন্যতম বিচারপতি বজলার রহমান ছানা ১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লার সম্ভান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ইউনুস বিশ্বাস এবং মাতা বাদেনুর নেসা। তাঁর পিতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী। বজলার রহমান ছানার শহরের প্রাণ কেন্দ্রে থাকা পৈত্রিক প্রায় ৭০ বিঘা জমির উপর আম গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিডিআর ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ১৯৭০ সালে নবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭২ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মেধাবী ছাত্র বজলার রহমান ছানা ১৯৭৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে ঔঁৎরংঢ়ৎঁফবহপব বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ৮২’ সালে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।

বৃহত্তর রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম ছাত্রনেতা বজলার রহমান ছানার ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটে। নবাবগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগ ও আশির দশকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৮০’ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরবর্তিতে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ ও ১৯৭৯-৮০ সালে নিবর্তনমূলক আটকাদেশে কারাবরণ করেন সেসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা বজলার রহমান ছানা। ৮৩’ সালে বিশেষ সামরিক শাসনামলে সামরিক আদালতে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন, যদিও পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। ৮৫’ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছর ঢাকার ধানমন্ডি ল’কলেজে আইনের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে ঢাকার জজ কোর্ট এবং ১৯৮৭ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে সহকারী এটর্নি জেনারেল এবং ১৯৯৯ সালে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে তিনি অসংখ্য সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন। ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ৮৭’ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরআগে ২০০১ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্ত দুই বছর পর তাঁকে আর স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়নি চারদলীয় জোট সরকার।

এ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিচারপতি বজলার রহমান ছানার নিকটাত্মীয় (ভগ্নিপতি) সহকারী অধ্যাপক আলী আশরাফ আজীজী বলেন,

ছনা ভাই তাঁকে নিয়োগ না দেয়ায় প্রতিকার চেয়ে আদালতে যেতে চান নি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সুপ্রিমকোর্ট রায়ের আলোকে ১০ জন বিচারককে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা আসে। স্বাক্ষরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে ফাইলটি গেলে তিনি বজলার রহমান ছানার নাম নেয় কেন জানতে চান? এ সময় তাঁকে জানানো হয় যে, তিনি আদালতের আশ্রয় নেন নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাঁর নামটি সংযুক্ত করে তবেই তিনি ওই ফাইলে স্বাক্ষর করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা থেকে ২০০৩ সালে গুণী এই মানুষটিকে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শতবর্ষ পূর্তি উৎসব সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে সাংস্কৃতি সংগঠন গাংচিল দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে তাঁকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করে।

বজলার রহমান ছানা ছিলেন সত্যিকার অর্থে উজ্জ্বল নক্ষত্র। যাঁকে বড় অসময়ে আমরা হারিয়েছি। বর্তমান সময়ে আইনের ব্যাখা ও বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে তাঁকে বড় দরকার ছিলো। সতাতা ও গুণের কারণে প্রতিপক্ষরাও তাঁকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হতেন। জীবনে বহুবার হীন রাজনীতির শিকার হয়েছেন। অসহিষ্ণু নোংরা রাজনীতির যাঁতাকালে পড়ে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর কথা বলায় মেধাবী ছাত্রটির রেজাল্টের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে কারা নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু কখনও আপোষ করেন নি।

সাংবাদিক হিসেবেও লড়েছেন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ মামালার বিচার করেছেন। আইনবিদ, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক হিসেবে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁর কর্ম তাঁকে আজীবন মর্যাদার উচ্চ আসনে রাখবে। বজলার রহমান ছানাকে অনুসরণ করলে আজকের ছাত্র রাজনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, নীতিহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা নির্মূল করা সম্ভব। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বজলার রহমান ছানারা যে রাজনৈতিক ধারার সূচনা করেছিলেন, সে ধারা ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবেই বজলার রহমান ছানার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।

লেখক : আসলাম-উদ-দৌলা
আহ্বায়ক বিচারপতি বজলার রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদ
ও সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী প্রেসক্লাব।


শর্টলিংকঃ