বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ আইনে পরিবর্তন আসছে


ইউএনভি ডেস্ক :

এ ব্যাপারে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন এ নির্দেশনা প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে বিদ্যমান আইনের সংশোধনী আনতে হবে। এ নিয়ে কাজ শুরু হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই।’

আগামীতে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) সব ধরনের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমেই করতে হবে। তবে সবার আগে গত ২০১৫ সালে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএর সংশোধিত আইনের আরও ব্যাপক সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে। এনটিআরসিএর সংশোধিত আইনে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষারও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মান ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি একটি পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

তারা বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি বা ম্যানেজিং কমিটির কর্তৃত্ব এবং নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করা যাবে। গভর্নিং কমিটি বা ম্যানেজিং কমিটির নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের মান ও যোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকে এ ধরনের নির্দেশনা এসেছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা জানান। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যেই ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ ও নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।

এ সব পদক্ষেপ সম্পর্কে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি সব স্কুল-কলেজকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে শিক্ষাঙ্গন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজের সব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা এবং চার মাস পর পর ক্লাস ক্যাপ্টেন পরিবর্তন অন্যতম পদক্ষেপ। এর আগে দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজে ৩৯ হাজারের অধিক বিষয় ভিত্তিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশও অন্যতম।’

তবে এ সব নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে ইতোমধ্যেই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) দাবি করেন, মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কঠোর হলে এ সব জটিলতা খুব সহসাই দূর করা যাবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে আগামীতে আরও কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে স্কুল ও কলেজগুলোকে। এ সব নির্দেশনা অনুসরণ না করা হলে অভিযুক্তদের এবং প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল এবং শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশ স্থগিত বা একেবারেই স্থগিত করা হতে পারে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে নতুন নিয়মে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে শিক্ষক পদের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের একাধিক ধাপে পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। নতুন নিয়মে বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ এবং এমপিওভুক্ত (বেতনের সরকারি অংশ পেতে যোগ্যতার প্রথম ধাপ) হতে নিবন্ধনের জন্য লিখিত পরীক্ষার আগে এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে।

প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দ্বিতীয় ধাপে অন-লাইনে পূরণ করা আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপির সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ অন্য সব কাগজপত্র পাঠাতে হয়। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের যথারীতি নিবন্ধন সনদ দেয়া হচ্ছে।

নতুন নিয়ম অনুসারে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছর-ভিত্তিক শূন্য পদের সংখ্যা নিরূপন, শূন্য পদের সংখ্যা অনুযায়ী লিখিত নিবন্ধন পরীক্ষার পর নির্ধারিত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উপজেলা, জেলা ও জাতীয়-ভিত্তিক মেধা তালিকা করা হচ্ছে। এরপর মেধাক্রম ও চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করছে এনটিআরসিএ। স্কুল-কলেজ পরিচালনা কমিটি শুধু যোগদানপত্র দেবেন। তবে কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হবেন না।

এতদিন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা বা গভর্নিং কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তারা বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা আবেদন করার সুযোগ পেতেন। তারাই পছন্দ মতা নিয়োগ দিতেন। নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির এ কর্তৃত্ব আর থাকছে না। তারা শুধু এনটিআরসিএ মনোনীত শিক্ষকদেরই নিয়োগপত্র দেবেন। নিয়োগ না দিলে নতুন আইন ও বিধিমতে স্কুল-কলেজের নিবন্ধন-স্বীকৃতি ও এমপিও বাতিল হবে।


শর্টলিংকঃ