ভাগ্য বিড়ম্বনায় মায়ের কোলে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুমকি


রাবি সংবাদদাতা:

রাজিয়া সুলতানা রুমকি। পিকআপ চালক বাবা এবং গৃহিণী মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান। জন্ম থেকেই রুমকির দুই পা বিকলাঙ্গ। আট-দশটা মানুষের মতো হাঁটতে পারেন না। 

কিন্তু তাতে কী? মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। সে স্বপ্নের জোরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বারান্দায় আজ রুমকি। তিনি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।

প্রতিবন্ধী রুমকির সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান।

অথচ পেছনের পথটা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। রুমকি রাজশাহী নগরীর বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ছোটবেলা থেকে তার চলাফেরা হুইল চেয়ার। মায়ের কোলে ভর দিয়েই তিনি স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চলে এসেছেন। এবার নতুন সংকটে পড়েছেন রুমকি। কারণ, তার বিভাগের ক্লাস রুম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনের তৃতীয় তলায়। রুমকির মায়ের পক্ষে নিয়মিত একা সিঁড়ি বেয়ে মেয়েকে তিন তলায় উঠানো সম্ভব নয়।

মায়ের কোলে চড়ে এরমধ্যে একদিন ক্লাসও করেছেন তিনি। কিন্তু বছরের পর বছর এভাবে ক্লাস করা রুমকির পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের শরণাপন্ন হন তিনি। ভবনের নিচতলায় ক্লাস হয় এমন একটি বিভাগে স্থানান্তর করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। উপ-উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা করবেন বলে মা নাজনীন বেগমকে আশ্বস্ত করেন। পরে রুমকির মা বিভাগ পরিবর্তনের জন্য উপাচার্য বরাবর, কলা অনুষদের ডিন ও আরবী বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে দরখাস্ত দেন।

মেয়েকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে রাবির শহীদুল্লাহ কলা ভবনে তিন তলা উঠছেন রুমকির মা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরবী দুটি বিভাগেরই ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় শহীদুল্লাহ কলাভবনের তিনতলায়। নিচতলায় বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের ক্লাস হয়। নাজনীন বেগম বলেন, ‘স্যারদের কাছে বিভাগ পরিবর্তনের কথা জানিয়েছি। যদি বাংলাতে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে রুমকি স্বাচ্ছন্দে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘যেদিন স্কুলে যাওয়া শুরু করে সেদিন থেকেই ওকে (রুমকি) কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করি। এখন আমার বয়সও বেড়েছে। মেয়েকে কোলে নিয়ে তিনতলায় উঠতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছি।’

রুমকি বলেন, ‘আমার জন্য প্রতিদিন ক্লাস করা দুষ্কর। কিন্তু আরবীতে নিয়মিত ক্লাস না করলে পরীক্ষায় পাশ করতে পারবো না। যদি বিভাগ পরিবর্তন করে নিচতলায় বাংলা বিভাগে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমার পাশ করা সহজ হবে, কষ্টও কম হবে।

হুইল চেয়ারে করে নিজ বিভাগের বারান্দায় রাজিয়া সুলতানা রুমকি।

আরবী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘রুমকির বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এ বিষয়ে আমি উপাচার্য বরাবর সুপারিশ করেছি।’ কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক বলেন, ‘রুমকির বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপ-কমিটিকে বিভাগ পরিবর্তনের ব্যাপারে জানিয়েছিলাম। কিন্ত উপ-কমিটি বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে।’

জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, ‘বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি সহজ নয়। আপাতত রুমকি ওই বিভাগেই ক্লাস করুক। উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলে অবশ্যই ওর জন্য শীঘ্রই একটি ব্যবস্থা করবো।


শর্টলিংকঃ