ভাঙ্গুড়ায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন


মানিক হোসেন, ভাঙ্গুড়া (পাবনা):

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আছাদুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যাহার ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে আটজন ইউপি সদস্য। রোববার (১ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫ টায় উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদিঘী বাজারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে মোট ১৬ টি দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ধরেন আট ইউপি সদস্য। এ আগে পাবনা দুর্নীতি দমন কমিশন ও পাবনা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।

আছাদুর রহমান
আছাদুর রহমান

অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা হলেন- আলহাজ্ব উদ্দিন, আব্দুল হামিদ, সবুজ্জল হোসেন, আয়নুল হক, আলমগীর হোসেন, জামাল উদ্দিন, কফিল উৃদ্দিন ও সাজিদা খাতুন। তবে চেয়ারম্যান আছাদুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খানমরিচ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, চলতি অর্থবছরে খানমরিচ ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে ২০৭ জন শ্রমিকের ব্যাংক স্বাক্ষর জাল করে ১৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুর রহমান। এছাড়া ইউনিয়নের ৫২১ জন ভিজিডি কার্ডধারী মহিলাকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার সময় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৫০ টাকা করে আদায় করেন তিনি। টাকা দিতে না পারলে তাদেরকে চাল দেয়া হয় না। এভাবে প্রতি মাসে ২৬ হাজার ৫০ টাকা তিনি পকেটে তোলেন। এমনকি ইউনিয়নের ঘোষবেলাই গ্রামের চায়না দাস, দাসবেলাই গ্রামের হাজেরা খাতুনের ভিজিডি কার্ডের চাল চেয়ারম্যান নিজেই ভোগ করেন। এই কর্মসৃজন ও ভিজিডি খাতে অনিয়ম করে গত চার বছরে ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এরপর ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পেও নানা অনিয়ম করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব লোকদেরকে সরকারি ঘর পাইয়ে দিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে পরমানন্দপুর, বড়পুকুরিয়া থেকে দুধবাড়িয়া, বৈদ্ধমরিচ থেকে কাজীপাড়া, মাদারবাড়িয়া থেকে রঘুনাথপুর ও কালিয়ানজিরা থেকে মুণ্ডমালা গ্রাম পর্যন্ত সরকারি টাকায় রাস্তা পুনঃর্নিমাণের সময় গ্রামের জনগণ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও সামাজিক তহবিল থেকে জোরপূর্বক লাখ লাখ টাকা আদায় করেন ওই চেয়ারম্যান। যে টাকার কোনো হিসাব নেই। এমনকি মাদারবাড়িয়া ও রঘুনাথপুর গ্রামের জমির মালিকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জবরদখল করে রাস্তা নির্মাণ করেছেন তিনি।

এছাড়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া হতে সমাজ গ্রাম পর্যন্ত কর্মসৃজন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা পুনঃর্নিমাণ করে একই রাস্তায় আরেকটি প্রকল্প দেখিয়ে ২.২৫০ মেট্রিকটন চাল আত্মসাৎ করে চেয়ারম্যান। তুচ্ছ অভিযোগে ইউনিয়নের পলাশপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম, রমনাথপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, দোহারি গ্রামের মোমিন সহ অনেককে ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। চলনবিল অধ্যুষিত নিমগাছি প্রকল্পের পুকুর চাষীদের কাছ থেকেও তিনি জোরপূর্বক লাখ লাখ টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগ চেয়ারম্যান আছাদুর রহমান।

আরোও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জামিন আদালতের বিষয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সরকারি সেবা দিতেও ওই চেয়ারম্যান অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তরাধিকার সনদ দিতে তার নির্দেশে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়। জন্ম নিবন্ধন করতে সরকারি ফি ২৫/৫০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। গ্রাম আদালতে বিচার পেতে ১০ থেকে ২০ টাকা সরকার নির্ধারিত ফির পরিবর্তে তিনি ১২ শত টাকা করে আদায় করেন। এসব অনিয়ম করে ওই চেয়ারম্যান গত চার বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এলজিএসপি প্রকল্প ও ইউনিয়ন পরিষদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশ নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করেন না ইউপি চেয়ারম্যান। সম্প্রতি এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ নিষেধ করে দেন চেয়ারম্যান।

তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান গত চার বছর ধরে সকল ইউপি সদস্যসহ গ্রামের সাধারণ মানুষের উপর শোষণ ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। সকল প্রকল্পের টাকা নামমাত্র কাজ করে দুয়েকজন মেম্বারের সাথে ভাগ যোগ করে খেয়েছেন। এতদিন ভয়ে আমরা কেউ মুখ খুলতে পারিনি। এখন আমরা সবাই একজোট হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিচার চাই। উল্লেখ্য, ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুর রহমানের নানা অনিয়মের তদন্ত পূর্বক শাস্তি দাবি করে গত (২৭ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার পাবনা দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত কার্যালয়ের উপ পরিচালক ও পাবনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তারা।

 


শর্টলিংকঃ