ভাঙ্গুড়ায় হাতুড়ে ডাক্তারের ভুতুড়ে চিকিৎসা!


ভাঙ্গুড়া(পাবনা)প্রতিনিধি:

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ভুয়া নামধারী ডাক্তারে এলাকা ছেয়ে গেছে। হাতুরে ডাক্তারের ভুতুরে চিকিৎসায় বিপাকে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন ছাড়াই আরেক চক্ষু সার্জনের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তিনি নৌকায় মিনি ডিসপেন্সারি নিয়ে দালালদের মাধ্যম বিভিন্ন স্থানের গ্রামীন হাট-বাজারে ধর্না দিচ্ছেন। ডাক্তার তিনি মস্তবড় এমন একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে বসে যাচ্ছেন কোন দোকানে। তখন সেটি হয়ে যাচ্ছে তার চেম্বার ! সিরিয়াল দিয়ে রোগী দেখেন একের পর এক। প্রতি রোগীর জন্য নির্ধারিত ভিজিট মাত্র ৫০ টাকা। এভাবেই চলছে অপচিকিৎসা। নামধারী এই চক্ষু সার্জনের নাম সজিব কুমার (৩৫)। তিনি পাশ্বর্বর্তী বেড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভবনে সিয়াম সামী আই কেয়ার অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টারে কর্মরত রয়েছেন বলে নিজের পরিচয় দেন।

গত শনিবার (১৮ জুলাই) সকালে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৈডাঙ্গা বাজারে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলামের দোকানে দেখা মেলে ওই চিকিৎসকের। তিনি একজন চক্ষু সার্জন সেজে রোগী দেখছিলেন সেখানে। এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে কিছুক্ষণ পর ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে সটকে পড়েন তিনি।

বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, মাইকিং করে বলা হয়,এখানে সব ধরণের জটিল-কঠিন চক্ষু রোগী এবং নাক,কান, গলা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। আরো প্রচার করা হয় শনিবার সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত এবং দুপুর তিনটা থেকে বিকাল ছয়টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন বিশেষজ্ঞ চক্ষু সার্জন। রোগী দেখবেন জাহিদুল মেম্বারের দোকানে। তাই আমরা এসেছি। এখন শুনছি তিনি চক্ষু সার্জন নয়,প্যারামেডিক্স।

জানতে চাইলে ওই নামধারী চিকিৎসক সজিব কুমার বলেন, তিনি একজন সহকারী মেডিকেল এসিস্ট্যান্ড এবং দীর্ঘদিন ধরে পাশ্বর্বর্তী বেড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভবনে সিয়াম সামী আই কেয়ার অ্যান্ড ফ্যাকো সেন্টারে কর্মরত আছেন। বিএমডিসি’র সদস্য বলে তিনি দাবী করেন। তার নিবন্ধন নং ১৩৬৩৮।

বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর নীতিমালা অনুযায়ী বিএমডিসি’র নিবন্ধন ব্যতীত কেহ ডাক্তার পরিচয়ে কোন রোগী দেখতে পারে না। আর বিএমডিসি তাদেরকেই নিবন্ধন প্রদান করে যারা এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী। ওই নামধারী চিকিৎসক যেহেতু ডিগ্রিধারী নয় সুতরাং তার নিবন্ধন থাকারও প্রশ্ন আসেনা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালায় বলা হয় বিএমডিসি অনুমোদিত যোগ্যতা ব্যতিরেক বানিজ্যিক ভাবে চক্ষু চিকিৎসা এবং চশমার ব্যবস্থা পত্র দেওয়া আইনের বহির্ভূত। কিন্তু বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এভাবেই পাবনার বিভিন্ন এলাকাতে রোগী দেখছেন তার মত অনেকেই।

এদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ভুয়া নামধরী চিকিৎসক সেজে প্রতারণার মাধ্যমে রোগী দেখা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা পালন করাতে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় অবিলম্বে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।


শর্টলিংকঃ