মতিহারে আড্ডা-গল্পে ‘গ্রুপ স্টাডি’


রাবি প্রতিনিধি:

কথায় আছে, ‘দশের লাঠি একের বোঝা’, তেমনি আবার আবার আছে, ‘দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’। সত্যিই তাই। প্রতিনিয়ত কতো কাজেই না আমরা গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করি। একার পক্ষে যেটা পাহাড় সমান কঠিন তা দশের কাছে তুচ্ছ ঘটনা। স্কুল, কলেজে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য এটা মনে হয় যুগোপযগী কথা।

পড়াশোনার কাজও যে, গ্রুপ আকারে করা যায়; তা প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে। এটা যেন শিক্ষার্থীদের নৈত্য-নৈমিত্তিক কাজের একটা অংশে পরিণত হয়েছে। সবাই নিছক গল্প ছলেও আয়ত্ত করছে বিভিন্ন অজানা জিনিস। সেটা আর কিছু নয়, বর্তমানে যেটা ‘গ্রুপ স্টাডি’ নামে সমধিক জনপ্রিয়।

পৃথিবীর প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই গ্রুপ স্টাডি যেন পড়াশোনার একটা ভিন্ন প্লাটফর্ম। তবে গ্রুপ স্টাডির ধরণ সবার কাছে এক রকম নাও হত পারে। অনেক সময় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝেও এক ধরনের গ্রুপ থাকে।

আবার, একই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যের গ্রুপের চিত্রও ভিন্ন হতে পারে। তবে গ্রুপ স্টাডির ধরণ যাই হোক না কেনো এর উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হলো- নতুন কিছু জানতে হবে, শিখতে হবে, অন্যকে জানাতে হবে। যার ফলে কঠিন বিষয়ও গ্রুপ স্টাডিতে সহজে পরিণত হতে বাধ্য হয়।

তেমনি নিজেদের পড়াশুনা ভাগাভাগি করে শেখার উদ্দেশ্য নিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার, লোটাস, জান্নাত, ববি, মামুন, রাফি, আসিফুর, শ্রুতি, ঈশিতা মিলে বানিয়েছে একটি গ্রুপ। এমন গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভাব নেই।

দেখলে মনে হবে কোনো এক আড্ডাস্থল। তবে এরূপ আড্ডার পাশাপাশি চলছে পড়াশুনাও। তারা শিখে নিচ্ছে সাংবাদিকতার বিভিন্ন টার্ম। মাঝে মাঝে কাউকে লাইভ রিপোর্ট করতেও দেখা যায়। কেউ ভুল করলে তা আবার অন্য কেউ দেখিয়ে দিচ্ছে। ক্যাম্পামে ঘুরলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো না কোনো ভাবে চলছেই ‘গ্রুপ স্টাডি’। এটা যেন খেলার ছলে শিক্ষা দিচ্ছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নিত্যদিনের সাধারণ চিত্র হলো নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা, অ্যাসাইন্টমেন্টসহ সঙ্গে থাকা টিউটোরিয়াল। এ সকল ব্যস্ততার মধ্যেও ক্লাস, খেলাধুলার অবসরে বন্ধুদের নিয়ে চলে গ্রুপ স্টাডি। কেউবা আবার মেতে ওঠে তারুণ্যভরা আড্ডায়। এভাবেই সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে শিক্ষার্থীদের গ্রুপ স্টাডি।

শুধুমাত্র গ্রুপ স্টাডি করার জন্যই শিক্ষার্থীদের গ্রুপ তৈরি হয় না। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন আড্ডা, কবিতার পাঠশালা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আড্ডা, রাজনৈতিক আড্ডাসহ নানা কর্মকান্ডে সারাদিন ব্যস্ত থাকে শিক্ষার্থীরা। আর সারাদিনের বেশিরভাগ সময় অনেক শিক্ষার্থীর কাটায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বরে।

এর মধ্যে ইবলিশ চত্বর (পুরাতন ফোকলোর চত্বর), কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির বারান্দায়, সিনেট ভবনের বারান্দায়, দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনে, হবিবুর মাঠে, মেয়েদের হলের পাশে, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বট গাছের পাশে বসে গ্রুপ স্টাডির আড্ডা। এছাড়াও ক্যাম্পাসের যেখানেই গাছের ছায়া পায় সেখানেই বসে আড্ডা।

তেমনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারেও চলে শিক্ষার্থীদের আনাগোন। ভোর হবার আগেই শিক্ষার্থীরা ভিড় জমাতে থাকে লাইব্রেরির দরজায়। পড়ালেখা আর আড্ডা চলে রাত পর্যন্ত। হল, বিভাগ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বিভিন্ন সংগঠন, খেলাধুলা, গ্রুপ স্টাডি এইগুলো নিয়ে ক্যাম্পাসে দিন কাটে শিক্ষার্থীদের। এটা যেন জ্ঞান অর্জনের অন্য এক পৃথিবী।

কথা হলো গ্রুপ স্টাডি করতে আসা এক গ্রুপ সদস্যদের সাথে। তারা জানালো, গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে অনেক কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যায়। নতুন নতুন বিষয় জানা যায়। কিছু কিছু বিষয় আছে যা নিজের কাছে খুব কঠিন মনে হয় কিন্তু গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে সেটা সহজ হয়ে যায়।

তাছাড়া বন্ধুদের সাথে একই সাথে আড্ডা দেওয়া হয়ে যায়। প্রত্যেকে আলাদা আলাদা করে পড়ার কাজ দেওয়া হয়। আর পরের দিন ওই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এভাবেই চলে তাদের পড়াশোনার আড্ডা।

শাহারিয়ার নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গ্রুপ আকারে পড়াশোনা করার জন্য বিভাগের শিক্ষকরা পরামর্শ দিয়েছেন। শিক্ষকরা বলেছেন গ্রুপ আকারে পড়াশুনা করলে যেকোনো বিষয় সহজেই পাড়া যায়। আর তার পরেও না পারলে শিক্ষকদের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য বলেছেন। তাই আমরা আগে নিজেদের মতে করে শেখার জন্য গ্রুপ বানিয়েছি। এতে এক সাথে আমাদের পড়ালেখাও হচ্ছে সাথে আড্ডাও।’

এভাবেই চলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা ধরণের আড্ডা। যার প্রতিটা আড্ডা থেকেই আসে নতুন জ্ঞান। ক্যাম্পাস জীবন আড্ডা ছাড়া আসলেই অর্থহীন। নিজেদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এবং পড়াশুনার জন্য অন্যতম হলো আড্ডা।

স্মৃতি হিসেবে আর যাই থাকুন না কেন? সবশেষে ক্যাম্পাসের সেই আড্ডা মনে করিয়ে দিবে কোনো এক পুরানো বন্ধুর কথা বা কোনো এক মধুর স্মৃতি। যা হয়তো কোনো এক গাছের ছায়ায় বসে গ্রুপ স্টাডির ছলে এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে বলেছিলো।


শর্টলিংকঃ