মৃত্যুফাঁদ গোদাগাড়ী মহাসড়ক : তিন মাসে ১৮ জনের প্রাণহানি


শামসুজ্জোহা বাবু, গোদাগাড়ী:

রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের গোদাগাড়ী এলাকায় লাশের মিছিল থামছে না। গোদাগাড়ী যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কটি গোদাগাড়ী উপজেলার উপর দিয়ে দুই জেলার যোগাযোগ পথ। মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়কে তিন মাসে ঝরেছে ১৮ প্রাণ। গত শনিবার এ সড়কেই বিয়ে বাড়ি যাবার কালে কার উল্টে শিশুসহ এক পরিবারের ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এত কিছুর পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নি কোন উদ্যোগ।

মৃত্যুফাঁদ গোদাগাড়ী মহাসড়ক : তিন মাসে ১৮ জনের প্রাণহানি

গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, এসড়কে ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৬ জন। আর শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই ৪ শিশুসহ ১২জনের মৃত্যু হয় । এসব দুর্ঘটনায় আরো ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া গোদাগাড়ী এলাকায় ৪ মাসে ৩০ টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিকেরও বেশি মানুষ।

গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার আতাউর রহমান বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে রেলগেট বাজারে হালকা বৃষ্টিতেই দুটি স্কুল বাসের সাথে একটি ঢাকা কোচের ত্রিমুখী সংঘর্ষে অল্পের জন্য রক্ষা পান শতাধিক ক্ষুদে শিক্ষার্থী। এর আগে নভেম্বর মাসে আমনুরা রোডে বর নিয়ে অর্ধশত বরযাত্রীসহ একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। তবে গত শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এ সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই পারিবারের ৭জনসহ ৮জনের মৃত্যু হয়।

আরো পেড়ুন:নোয়াখালীতে ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা : বন্দুকযুদ্ধে শিবিরকর্মী নিহত

স্থানীয়দের বরাত ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোদাগাড়ীর পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বলছেন, দুর্ঘটনা কবলিত কারটি পুরনো মডেলের। হয়তো গিয়ার বক্সে কাজ করেনি অথবা ব্রেক ফেল করেছে। এ দুই বিষয় ছাড়া প্রাইভেটকারটি ফাঁকা সড়কে বিপরিত সাইডে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগার কথা নয়। যদিও গোদাগাড়ী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট জগদিশ অভার লোড এর কথা বলছেন। এছাড়া সড়ক উঁচু-নিচু তাই দ্রুতগতি থাকায় সামনের চাকা হাওয়ায় ভেসে যাওয়ায় ব্রেকে কাজ করেনি বলে তার ধারণা।

এদিকে চলতি বছরের গত ২৬ জানুয়ারি বিজয়নগর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গোদাগাড়ীতে নসিমন উল্টে খাদে পড়ে শরীফুল ইসালাম (৪৮) নামে মাছ ব্যবসায়ী নিহত হন। নিহত শরীফুল উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের মান্ডইল গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে। এ ঘটনায় নসিমন চালক লালন শেখ (৩৪) আহত হন। গত ২৪ জানুয়ারি গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় আকরাম হোসেন (৪৮) নামে এক কলেজ শিক্ষক নিহত হন এ দুর্ঘটনায় জকিম উদ্দিন (৪০) নামে এক রিকশাচালক আহত হন গোদাগাড়ী।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে গোদাগাড়ী উপজেলার সাধুর মোড় এলাকায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় আব্দুল আলিম সোহাগ (১২) ও সুমন (১১) নামে দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় জাহিদ হোসেন (১০) নামে আরেক শিশু আহত হয়। তারা উপজেলার নবগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। এছাড়াও গত জানুয়ারী মাসে লালবাগ ও সিএন্ডবি এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে বাবা মায়ের সামনেই দুই শিশু নিহত হয়।

সর্বশেষ, শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) গোদাগাড়ীর কাদিপুর এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ঘটনাস্থলে তিনজের মৃত্যু হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আরো চারজনের মৃত্যু হয় । এছাড়া ঘটনার পরের দিন শুক্রবার আরো একজনের মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়া গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও গাড়ি ড্রাইভারদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে। গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রন করে রাখা ও ওভারটেকিং বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, ধারনা করা হচ্ছে প্রাইভেটকারটিতে অতিরিক্ত যাত্রী এবং দ্রুত গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন,রাজশাহী-গোদাগাড়ী সড়কে পুলিশের কয়েকটি চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে গাড়ির কাগজপত্র দেখা হয়। এই চেকপোস্টগুলোতে যানবাহনের সিট ক্যাপাসিটি (বসার ধারণ ক্ষমতা) দেখা হবে। প্রয়োজনে মামলাও দেয়া হবে। সব মিলে ট্রাফিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।

এ সড়কে দুর্ঘটনা রোধে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এ সড়কটি যৌথ ভাবে মহানগর ও জেলা পুলিশের মধ্যে পড়ে। সেক্ষেত্রে আমরা যৌথ ভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকি। তবে স্পিড ব্রেকার বসানো বা গাড়ির স্পিড টেস্টের বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ দেখাশোনা করে।


শর্টলিংকঃ