মোহনপুরে ডিজিটাল সেন্টারের সুফল পাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ


রিপন আলী, মোহনপুর:

গ্রামীণ জনপদে তথ্য প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি)। ফলে রাজশাহী মোহনপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে ফোর-জি যুগেও ইন্টারনেটের গতি কিছুটা কম থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার আরও প্রসার এবং ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতনরা।

মোহনপুর উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারে সহজেই প্রযুক্তিগত সেবা পাচ্ছে মানুষ। ছবি: প্রতিনিধি

মোহনপুর উপজেলা ৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। আর জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে স্বেচ্ছায় সেবা দিচ্ছেন কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিজ্ঞ একজন পুরুষ ও একজন নারী। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে ইউডিসি।

এক সময় গ্রামীণ জনগণকে চাকরি, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফরম পূরন, ফটোকপি ও ছবি উঠানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবা নিতে দূর দুরান্তে যেতে হতো। এখন দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) মাধ্যমে স্বল্প সময়ে দেয়া হচ্ছে নানা ধরণের তথ্যসেবা।

তথ্য প্রযুক্তির সরঞ্জামের স্বল্পতা থাকলেও সেবাতে যেন কমতি নেই ইউডিসিতে। প্রতি ইউডিসিতে সরকার থেকে প্রথমে ডেক্সটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ক্যামেরা ও প্রজেক্টর দেয়া হয়েছিল। যার অধিকাংশ এখন নষ্ট এবং বাকিগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম। পরবর্তীতে একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়।

আর ইউডিসিতে জন্ম নিবন্ধন, কম্পিউটার কম্পোজ ও প্রিন্ট, ফটোকপি, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ভিডিও কলিং, চাকরির তথ্য প্রাপ্তি ও আবেদন করা, স্কুল-কলেজে ভর্তি, জমির খতিয়ান, লেমিনেটিং, পাসপোর্ট ফরম পূরণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মোবাইল ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ জন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সেবা নিতে আসেন। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই সহজ ও গতিশীল। ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে প্রতিদিন উদ্যোক্তারা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, আবার কখনো রাত ৮-৯টা পর্যন্ত কাজ করে থাকেন।

ধূরইল ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম শিমুল বলেন, ইউডিসিতে একটি আবেদন লিখে নিতে এসেছি। আগে ৫ কিলোমিটার দূরে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে উপজেলা সদরে যেতে হতো। এখন ইউনিয়ন পরিষদে এসে সহজে এবং স্বল্প সময়ে কাজ করা হচ্ছে। এতে সময় ও শ্রম দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।

এছাড়া পালশা গ্রামের বেকার সোহেল রানা, খানপুর গ্রামের ভ্যানচালক মাসুদ রানা, পিয়ারপুর মজিদুল হক, কাশিমালার রেজাউল ইসলামসহ কয়েজন বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার চালু হওয়ায় প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষদের জন্য খুবই সুবিধা হয়েছে। এখন কষ্ট ও বেশি টাকা খরচ করে হাট-বাজারে যেতে হয় না।

উপজেলার ১ নং ধূরইল ইউনিয়নের উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন মুন্টু বলেন, গত নয় বছর থেকে উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করছি। ইউডিসিতে এখন পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো সরঞ্জাম কিনেছি।

বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সেবা, ফটোকপি, ছবি উঠানো থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক কাজ করে থাকি। জনগণকে কষ্ট করে আর উপজেলা সদরে যেতে হয় না। স্বল্পতেই সেবা দিতে পারছি। আর এখান থেকে যে আয় হয় তার কিছু অংশ নিজের এবং কিছু অংশ ইউডিসির কাজে ব্যয় করা হয়।

জেলার মোহনপুর উপজেলার ধূরইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাজিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান সময়ে সরকার যুগোপযোগী সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার চালু করেছে। আর তথ্য সেবার মাধ্যমে জনগণ উপকৃত হচ্ছে। এটি সরকারে নিঃসন্দেহ একটি ভালো উদ্যোগ।

মোহনপুর উপজেলা নিবাহী কর্মকতা সানওয়ার হোসেন বলেন, সরকারের সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো শুরু থেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে। সেই সঙ্গে নিজ উদ্যোগে কাজ করছেন উদ্যোক্তারা। ডিজিটাল সেবা পেতে জনসচেতনা বাড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, উদ্যোক্তারা যেন বিনিয়োগ করে নিজেরাই উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠে। অর্থ্যাৎ অন্যের ওপর যেন নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে। এজন্য আমরা নিয়মিত তদারকিও করে থাকি। সকল উদ্যোক্তা একত্রিত হয়ে মোহনপুর উপজেলায় সরকারি সেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হব।


শর্টলিংকঃ