রাজশাহীতে সাজাপ্রাপ্ত অন্তঃস্বত্তা আসামীর প্রবেশনে মুক্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক:

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারির একটি মামলায় সায়মা খাতুন নামে পাঁচ মাসের এক অন্তঃস্বত্তা আসামি ও তার স্বামী জাকির হোসেনকে ব্যতিক্রমধর্মী সাজা দিয়েছেন রাজশাহীর একটি আদালত।আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুল ইসলাম এই দম্পতিকে কারাগারে না পাঠিয়ে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের শর্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে প্রবেশনে থেকে সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছেন।

রাজশাহী কোর্ট

তাদের বাড়ী গোদাগাড়ী থানাধীন ছোট নারায়নপুর গ্রামে। উভয়েই দিনমজুর এবং মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) এ রায় ঘোষণা করা হয়।রায় ঘোষণাকালে আদালত বলেন, আসামীরা দোষী সাব্যস্ত হলেও সায়মা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় মা ও শিশু স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য অনাগত সন্তানের জন্ম পরিকল্পিত এবং নিরাপদ হওয়া আবশ্যক।

বর্তমানে কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুন কয়েদির বদ্ধ পরিবেশে বসবাসের কারণে করোনাকালে সেখানে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত দূরুহ ব্যাপার। এরুপ প্রেক্ষিতে কারাগারে মা ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ঝুকিপূর্ণ। তাই আসামিদের অপরাধের ধরন, বয়স, অনাগত সন্তান ও মায়ের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ প্রসব ইত্যাদি বিবেচনায় তাদের প্রবেশনের সুযোগ প্রদান করা সমীচীন । এই সুযোগের বিপরীতে আসামিদের আদালত কতৃক আরোপিত শর্ত অবশ্যই মেনে চলতে হবে; না মানলে আসামিকে অবশ্যই ০৬ মাসের সাজা ভোগের জন্য জেলে যেতে হবে।

আর শর্ত ঠিক মত পালন করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন প্রবেশন অফিসার মোঃ আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আসামি সম্পর্কে আদালতে আমরা একটি প্রাক-প্রতিবেদন পাঠাই। প্রতিবেদনে এটি তার প্রথম অপরাধ কিনা, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা, প্রতিবেশীরা তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়। আদালতে প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত দেন।

প্রবেশনাধীন আসামি জাকির হোসেন বলেন, এই সুযোগকে আমি কাজে লাগাব।নিজেদের সংশোধনের জন্য প্রবেশন অফিসারের নির্দেশনা মত চলাফেরা করব। স্ত্রীর যত্ন নিয়ে একটি ভাল পরিবেশে সন্তান জন্ম দানের চেষ্টা করব।

জানা গেছে, রাজশাহী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে এমন সাজাপ্রাপ্ত অন্তত ২৬ আসামিকে কারাগারে যেতে হচ্ছে না। ছোটখাটো অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে সংশোধনের মাধ্যমে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ‘প্রবেশন’ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাড়িতে থাকার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিছু শর্তসাপেক্ষে বাড়িতেই তারা সাজা খাটছেন। ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০’ অনুযায়ী এমন সুবিধা পাচ্ছেন তারা।

আইনে প্রবেশন হচ্ছে কোনো আসামির প্রাপ্ত দণ্ড বা শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বাসায় পারিবারিক পরিবেশে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া। তবে দণ্ডিত আসামির বয়স, স্বভাব-চরিত্র, পূর্ব ইতিহাস, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, অপরাধের ধরন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। প্রবেশনে দণ্ডিত ব্যক্তির ওপর আরোপিত শর্ত ভঙ্গ করলে দণ্ড ভোগ করতে পাঠানো হয় কারাগারে। এক বছরের কম নয় এবং তিন বছরের বেশি কাউকে প্রবেশনে দেওয়া যাবে না বলে আইনে বলা হয়েছে।

রাজশাহী আদালতের আইনজীবী শামীম আহমেদ বলেন, প্রথম ও লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে আসামিরা নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন। আদালতের নির্ধারিত সময়ে তারা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকেন। এর ফলে একদিকে মামলার জট কমবে এবং আমাদের কারাগারগুলোতে আসামিদের চাপও কমবে।


শর্টলিংকঃ