লাইকি-টিক টকে বুদ তরুণেরা, ছড়ানো হচ্ছে বিদ্বেষ


এম এ আমিন রিংকু:

গানের সাথে লিপ্সিং করে সেটির ভিডিও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার প্লাটফর্ম হিসেবে শুরু হলেও সে জায়গায় আর নেই উঠতি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং এপ্লিকেশন টিক – টক ও লাইকি। কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট, মাদক গ্রহণে উৎসাহ আর  অশ্রাব্য ভাষার  ব্যাবহারে ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমদুটি। পর্নোগ্রাফিতে উৎসাহ দেওয়ারও আভিযোগ রয়েছে এপ্লিকেশনদুটির বিরুদ্ধে।

শুরুটা ২০১৪ সালে মিউজিক্যালি নাম দিয়ে। তখন আপলোড করা গানের সাথে গলা মিলিয়ে ভিডিও করা এবং সেটি বন্ধুদের সারহে শেয়ার সুযোগ দিয়ে জনপ্রিয়তালাভ করেছিল মিউজিক্যালি। ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ এটির ব্যাবহারকারী ২০০ মিলিয়ন পৌঁছায়। পরে গানের কপিরাইট আইন আমান্য করার অভিযোগে  বিভিন্ন দেশে মামলা হলে ২০১৮ সালের আগস্টে মিউজিক্যালি নাম পরিবর্তন করে টিক – টক রাখে  বেইজিং ভিত্তিক চীনা কোম্পানি বাইট ড্যান্স।

লাইকি ও টিক – টক  এপ্লিকেশন দুটিতে ঢুকলেই সবচেয়ে বেশি  চোখে পড়বে স্কুল পড়ুয়া কিশোর থেকে উঠতি বয়সি তরুণদের একাউন্ট। আর এই একাউন্ট গুলির অধিকাংশতে দেখা মেলেনা কোন সৃষ্টিশীল কনটেন্টের। মাদক গ্রহণে উৎসাহ, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, আশালিন অঙ্গভঙ্গি ও আক্রমণাত্মক কন্টেন্টে বেশি লাইক কমেন্ট পড়ায় লেজারবোর্ডের শীর্ষে থাকে ভিডিওগুলি। আর নিজের ভিডিওতে বেশি লাইক কমেন্ট পড়ার আশায় এই ধরণের ভিডিও বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে কিশোর- তরুণ বয়সীরা।

ভিডিও দেখুন এখানে 

চলতি বছরের মার্চের পর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের বড় একটা অংশ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিটিআরসি’র প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৫ লাখ বলে জানিয়েছে সরকারি এ সংস্থাটি।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মুসফিক আলম পাশা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান ,  শিশুদের গোড়াপত্তন অর্থাৎ নীতি নৈতিকতায় ভিত্তি শক্ত মজবুত ও দৃঢ় না হলে  জাতি এক সময় কঠিন হতে কঠিনতম সময় পার করবে। মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছানো এসব কন্টেন্টগুলো শুধুই লেখাপড়া বা নৈতিকতার অবক্ষয়য় ঘটাচ্ছে না এসব এপ্লিকেশন আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।

সুশাসন ও সমাজ বিশ্লেষক সুব্রত পাল এধরণের কন্টেট সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী উল্লেখ করে বলেন, মজার মোড়কে অনেক সময় পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা সংস্কৃতিকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর কুপ্রভাব পড়ছে শিশুমনেও। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। আর এসব কারণে অবিলম্বে দেশে টিক টক ও লাইকি নিষিদ্ধ করার আবেদন জানান এ সমাজ গবেষক।

সুজনের রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দীন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিকর বিষয় পরিবেশনের ফলে সমাজে লাইকি ও টিক টকের  প্রভাব বিপজ্জনক হতে পারে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে শিশুমনে। দেশে এই ধরণের এপ্লিকেশন বন্ধ না করা গেলে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলে Tপর্নোগ্রাফিতে ইন্ধনের অভিযোগে ‘টিক টক’  নিষিদ্ধ করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় মাদ্রাজের হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এই অ্যাপের মাধ্যমে তৈরি ভিডিও ভারতের কোনও সংবাদমাধ্যমে না দেখানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়।পরে সারা ভারতে নিষিদ্ধ হয় টিক টক।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে দেশে ৫৬০টি পর্নো সাইট বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এই ঘোষণা সে সময় দ্রুত কার্যকর করে সংশ্লিষ্টরা।


শর্টলিংকঃ