প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের নামে ‘ভুয়া’ ফ্লাপ বা প্রশংসাবাণী ছাপানোর প্রতিবাদ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় রাজশাহীর এক ফ্রিল্যান্স লেখককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনায় নগরীর চন্দ্রিমা থানায় ভুক্তভোগী মুহিত হাসান সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
ফ্রিল্যান্স লেখক মুহিত হাসানের সাধারণ ডায়েরির কপি
জিডিতে মুহিত নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকা বসবাস করেন। তার বাবার নাম মো. আবুল হোসেন চৌধুরী।
মুহিত হাসান জিডিতে উল্লেখ করেছেন, ‘গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক জনৈক মাসরুর আরেফিনের দ্বারা প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠান। ওই দিন দুপুরে ওই প্রতিবাদপত্রের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও প্রকাশ্যে টেলিফোন আলাপে আমি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করি।’
‘এর কিছুক্ষণ পর বিকেল ৩টা ১ মিনিটে পূর্বোক্ত মাসরুর আরেফিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তার নিকট থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আলতাফ শাহনেওয়াজ ওরফে নির্লিপ্ত নয়ন (সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক প্রথম আলো) পরিচয়ে নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল করেন।’
প্রতিবাদ বিবৃতি হাতে হাসান আজিজুল হক। ছবিটি বৃহস্পতিবার তোলা
জিডিতে মুহিত অভিযোগ করেন, “আমি ‘কেন হাসান আজিজুল হকের পক্ষে এবং মাসরুর আরেফিনের বিপক্ষে লেখালেখি করছি’ তার কৈফিয়ত দাবি করে আশালীন ভাষা-ভঙ্গিতে ও চড়া গলায় আমাকে ধমকা-ধমকি করতে থাকেন তিনি (আলতাফ শাহনেওয়াজ)। আমি এর প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে, তিনি আমাকে ‘দেখে নেওয়ার’ ও ‘চিরদিনের মতো বিনাশ করার’ হুমকি দেন এবং ‘ভয়ভীতি’ দেখান।”
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার আশঙ্কা উক্ত আলতাফ শাহনেওয়াজ শুধু টেলিফোনে হুমকি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হবেন না, আমার জানমালের ক্ষতি সংঘটনের চেষ্টা করতে পারেন। এমনকি মাসরুর আরেফিনের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্ররোচনায় আমার প্রাণনাশের চেষ্টাও করতে পারেন।’
এবিষয়ে আলতাফ শাহনেওয়াজ ওরফে নির্লিপ্ত নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই মুহিত হাসানকে ফোন করেছিলাম। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তি সম্পর্কও দীর্ঘদিনের। তবে এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অফিস থেকেই গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হবে’।
ফ্রিল্যান্স লেখক মুহিত হাসান বলেছেন, ‘আমি এই কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিষয়টি বিভিন্ন স্তরে অবগত করেছি। এমন অবস্থায় আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আগষ্ট আবছায় বইয়ের মোড়ক ও হাসান আজিজুল হকের ফ্লাপ বা প্রশংসাবাণী
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির জিডির সত্যতা স্বীকার করেছেন। ওসি বলেন, ‘মুহিত হাসান নামে এক ব্যক্তি এ ব্যাপারে থানায় সাধারন ডায়েরি করেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জানা যায়, অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রথমা প্রকাশনী থেকে লেখক মাসরুর আরেফিনের ‘আগস্ট আবছায়া’ উপন্যাস প্রকাশ করা হয়। বইটির মলাটে খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের নামে ‘ভুয়া’ একটি ফ্লাপ বা প্রশংসাবাণী ছাপানো হয়। বিষয়টি নজরে এলে হাসান আজিজুল হক এটিকে প্রতারণার সামিল উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে একুশে পদকজয়ী কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক এর প্রতিবাদে গণমাধ্যমে বিবৃতিও পাঠান। একই সঙ্গে বানোয়াট ‘ফ্লাপ বা প্রশংসাবাণীটি’ প্রত্যাহার করে ‘আগস্ট অবছায়া’ বইটির মলাট নতুনভাবে ও সংশোধিত আকারে প্রকাশ করতে ‘প্রথমা প্রকাশনী’র প্রকাশককে অনুরোধ জানান।
