৩০ বছর ধরে পায়ে হেঁটে ডিম বিক্রি করছেন তিনি


কলিট তালুকদার, পাবনা:

জীবন সংগ্রামে হার না মানা এক মানুষ পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের পৈলানপুন গ্রামের রাবেয়া খাতুন। একটি দুইটি বছর নয় ৩০ বছর ধরে ডিম বিক্রি করায় যিনি পরিচিত পেয়েছে ‘ডিম দাদি’ নামে। সাত মাসের গর্ভবর্তী থাকা অবস্থায় স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন থেকে কখনো প্উারুটি, কখনো ডিম বিক্রি করে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছেন দুই সন্তানকে। জমি কিনে বাড়িও করেছেন, কারো কাছে হাত পাততে হয়নি তাকে।

এভাবেই গ্রামে গ্রামে ডিম বিক্রি করেন রাবেয়া খাতুন
এভাবেই গ্রামে গ্রামে ডিম বিক্রি করেন রাবেয়া খাতুন

রাবেয়া খাতুন জানান, ছোট বয়সে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। স্বামী আলিমুদ্দিন কৃষিকাজ করে যা উপার্জন করতেন তাই দিয়ে সুখে কাটছিল তাদের দিন। বিয়ের বছর খানেকের মাথায় রাবেয়া খাতুন জন্ম দেন একটি কন্যা সন্তানের। নাম আজিরন খাতুন। এর কয়েক মাস পর আবার গর্ভবর্তী হন তিনি। সংসারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মতের অমিল হওয়ায় স্বামী আলিমুদ্দিন তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এরপর ভূমিষ্ঠ হয় ছেলে ফরহাদ হোসেন।

স্বামী ছেড়ে যাওয়ায় দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন রাবেয়া। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে শুরু করেন পাউরুটি বিক্রি। অনেক কষ্টে ছেলে-মেয়েকে বড় করে বিয়ে দেন। আশা ছিল শেষ বয়সে একমাত্র ছেলে তাকে দেখেশুনে রাখবে। কিন্তু সেই আশাও পূরণ হয়নি তার। ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা শহরে পাড়ি জমান। খোঁজ রাখেন না মায়ের! যে সন্তানকে তিলে তিলে বড় করে তুলেছেন; সেই সন্তানের কাছে ঠাঁই না পেয়ে বাধ্য হয়ে আবার নেমে পড়েন রাস্তায়।

স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে একশত টাকা ধার নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে দেশি হাঁস-মুরগির ডিম কিনে শহরে বিক্রি শুরু করেন। দীর্ঘ ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে খালি পায়ে হেঁটে পৌর শহরের অলিগোলি ঘুরে ঘুরে ডিম বিক্রি করে আসছেন রাবেয়া। ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি পাঁচ শতক জমি কিনেছেন। কয়েক শতক জমিও লিজ রেখেছেন। সবাই তাকে এখন ‘ডিম দাদি’ নামে চেনেন।

রাবেয়া খাতুন আরো জানান, তিনি সবসময় খালি পায়ে হেঁটে চলাফেরা করেন। কোনো গাড়িতে চড়েন না। সপ্তাহে চারদিন বিভিন্ন গ্রাম থেকে ডিম কেনেন; বাকি দিনগুলো শহরে এসে বিক্রি করেন।গড়ে একদিনে ৫০ হালি ডিম বিক্রি করেন তিনি। সপ্তাহে ৭০০-৮০০ টাকা লাভ হয়। মাঝে মধ্যে ডিম ফেটে গেলে বা পচা বের হলে তাকে খেসারত দিতে হয়।

রাবেয়া খাতুনের আক্ষেপ একটাই, ছেলের কাছে ঠাঁই হয়নি তার; খোঁজ রাখেন না মেয়েও। তার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই তার। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি যেন কর্মের মধ্য দিয়ে পার করতে পারেন- এটাই তার আশা।

গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। রাবেয়া খাতুনের মতো জীবন-সংগ্রামী মানুষ সমাজে দৃষ্টান্ত।

তিনি আরো বলেন,এমন মায়ের জন্য সন্তানের গর্ব করা উচিত। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, তার সন্তানেরা তার খোঁজ করেন না।

 


শর্টলিংকঃ