পদ্মায় ৫ জেলে অপহরণের ঘটনাস্থলই অস্বীকার বিএসএফ’র!


জিয়াউল গনি সেলিম, সীমান্ত থেকে ফিরে :

রাজশাহীর পদ্মা নদী হতে পাঁচ জেলেকে অপহরণের ঘটনাস্থলই অস্বীকার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফ। ভোল পাল্টে তারা দাবি করেছে- খরচাকা নয়, প্রেমতলী বিওপির সামনে ভারতীয় ভূ-খণ্ড হতে আটক হয়েছে পাঁচ বাংলাদেশী। তবে তাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বিজিবি। এরইমধ্যে সীমানা মাপজোখ করেও  দেখা হয়েছে। তাতে প্রমাণিত, সীমানা পেরিয়ে  বাংলাদেশের এক কিলোমিটার অভ্যন্তরে বিএসএফ অনুপ্রবেশ করে জেলেদের ধরে নিয়ে যায়

পদ্মা নদী
ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলে বন্দি বাংলাদেশের জেলে রাজন, নূরুজ্জামান, কাবিল, শফিকুল ও শাহীন (সর্বডানে)

গত ৩১ জানুয়ারি গহমাবোনা এলাকায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বিএসএফ। এরা হলেন- রাজন হোসেন (২৫),  নুরুজ্জামান দোয়েল (২৭), কাবিল হোসেন (২৫), শাহীন আলী (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৩০)। পবা উপজেলার গহমাবোনা গ্রামে তাদের বাড়ি। এঘটনার পরই বিজিবি প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানায়। কিন্তু প্রথমে সাড়া দেয় নি বিএসএফ। পরে বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নির্মল চরের সীমান্ত পিলার নং ৫৩/২/এস-এর কাছে পতাকা বৈঠক হবে।

কিন্তু বিএসএফের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজিবি’র প্রতিনিধি দল সেখানে হাজির হলেও আসে নি বিএসএফ। ফলে শুন্যহাতেই ফিরে আসতে হয় বিজিবিকে। পরে আবারো তারা বিকেল সাড়ে ৪টায় পতাকা বৈঠকের বসার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে পতাকা বৈঠক হলেও বিএসএফ বিজিবিকে জানানো হয়, ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বাংলাদেশী ৫ জেলে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

পদ্মা নদী
বাংলাদেশ সরকারের দেয়া জেলের নিবন্ধন কার্ড হাতে রাজনের মা

তবে বিজিবি’র পক্ষ থেকে এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, ভারতে নয় বরং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে  পদ্মা নদী থেকে বিএসএফ ওই ৫জেলেকে  ধরে নিয়ে গেছে। জবাবে কেবল দুঃখপ্রকাশ করে বিএসএফ- এমন তথ্য জানিয়েছেন বিজিবি’র ১ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ।

এদিকে, একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, পদ্মা নদী হতে ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি দু’দেশেরই সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌছেঁছে। এরপর বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলীকে তলব করে সীমান্তে হত্যা ও অপহরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপরই বিএসএফের পক্ষ হতে ‘প্রোটেস্ট নোট’ পাঠানো হয়েছে বিজিবি’র কাছে।

ওই নোটে তারা দাবি করেছে,  পাঁচব্যক্তিকে বাংলাদেশের প্রেমতলী বিওপি এলাকার সামনে ভারতের সীমানার ভেতরে আটক করেছে বিএসএফ। আটককৃতদের গরুর রাখাল বলে দাবি বিএসএফের।অথচ আটকৃতরা বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত জেলে। তারা খরচাকা বিওপির গহমাবোনায় পদ্মা নদীতে  নৌকাতে মাছ ধরছিল। এসময় বিএসএফ স্পীড বোর্ডে তেড়ে এসে তাদের অপহরণ করে।

পদ্মা নদী
পদ্মার এই অংশ হতে জেলেদের অপহরণ করে বিএসএফ

এদিকে, বিএসএফের এই অসত্য তথ্যের কড়া প্রতিবাদ করেছে বিজিবি। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিজিবি’র একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এসময় আমিন দিয়ে সীমানা মাপজোখ করা হয়।  এতে দেখা যায়, পদ্মা নদীর ঠিক যে স্থান হতে বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যায় সে জায়গার অবস্থান সীমানা হতে বাংলাদেশের এক কিলোমিটার অভ্যন্তরে।

এ বিষয়ে বিজিবি’র ১ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, ‘বিএসএফের প্রোটেস্ট নোটের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নতুন করে সীমানা মেপে দেখেছি। তাতেও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের সীমানার এক কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করে পদ্মায় মাছ ধরা অবস্থায় পাঁচ জেলেকে তুলে নিয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুর রহমানের বয়স এখন প্রায় ৬০ বছর। তিনি বলছিলেন, গহবাবোনা এলাকায় নদী ও চরে সীমান্ত পিলার বা কাঁটাতারের বেড়া নেই। এই সুযোগে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে বিএসএফ। স্থানীয় জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে নামলেই তেড়ে আসে বিএসএফ। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে তারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। ফলে জেলেরা ভয়ে প্রায় গেল ৬দিন ধরে পদ্মায় আর নামতে পারছে না।

ঘটনা প্রবাহ

বিএসএফের হাতে অপহৃত স্বামী-সন্তানের মুক্তির আকুতি পরিবারের

দু’দফা বৈঠকের পরও পাঁচ জেলেকে ফেরত দেয় নি বিএসএফ

পতাকা বৈঠকের সময় দিয়েও হাজির হয়নি বিএসএফ

রাজশাহী সীমান্ত থেকে পাঁচ বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ 


শর্টলিংকঃ